মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার ১৭ আসামির মধ্যে ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বাকি ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
প্রধান আসামি তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। আরেকটি ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাদের।
এছাড়া সাইফুল হাসান, আবদুল মতিন, তুষার আহমেদ, মীর জাকারিয়া, সাইফুল ইসলাম রাজা, আবদুল মালেক ও তসলিম হাসানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আরেকটি ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বাকি আসামিদের মধ্যে মেহেরুন্নিসা মেরি, মীর মহিদুর রহমান, মইনুল হক, সফিজ উদ্দিন আহমেদ, কামরুল হোসেন খান, হুমায়ুন কবির ও ননী গোপাল নাথকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি আরেকটি ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এই মামলার আরেক আসামি জামাল উদ্দিন সরকারকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অপর একটি ধারায় ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আলোচিত এ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘হলমার্কের ঘটনা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত মর্মে অত্র আদালত মনে করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।’
এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, ‘এ রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না। আমরা চেয়েছিলাম আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।’
দেশের ব্যাংকিং খাতের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া বৃহৎ কেলেঙ্কারিগুলোর একটি হলমার্ক। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুঁইফোড় গ্রুপটি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ঋণের নামে বের করে নেয়া এ অর্থ আদায়ে মামলা হয়েছে। যাতে গ্রেফতার হন হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদসহ প্রতারক চক্র।
মামলায় প্রথম দফায় রায় ঘোষণার জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছিল। তবে সেদিন মামলাটি রায় থেকে উত্তোলনপূর্বক ফের দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন করেন দুদকের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম। সেই আবেদন মঞ্জুর করে ৪ মার্চ দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রাখা হয়। সেদিন সাক্ষ্য দেন তৎকালীন দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান ও কেশব রায় চৌধুরী। এরপর পুনরায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১২ মার্চ দিন ধার্য করা হয়। এরপর আজ ১৯ মার্চ রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।