কৃষি
অর্থনীতি
0

ফরিদপুরে ৩০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের আশা

পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয় কালো দানা বা বীজ, যার বাজার দর আকাশছোঁয়া। তাই একে বলা হয় কালো সোনা। একটা সময় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর থাকলেও দিনে দিনে দেশে এই কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে। বর্তমানে সারাদেশে পেঁয়াজ বীজের যে চাহিদা তার ৫০ শতাংশ যোগান দেয় ফরিদপুরের চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় ১৮শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। যা থেকে এবার প্রায় সাড়ে ৭ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জেলা সদরে আবাদ হয়েছে।

গত বছর ফরিদপুর জেলায় ১ হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছিল। গতবারের তুলনায় এ বছর আবাদের পরিমাণ বেড়েছে। ভালো লাভ পাওয়ায় এই ফসলের দিকে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া সরকারের বিশেষ তদারকি থাকায় স্থানীয় কৃষি দপ্তরও এই পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছে।

ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকার লাভলি আক্তার ও ইমতাজ মোল্লা দম্পত্তি গত একযুগ ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করছেন। দুই বিঘা দিয়ে শুরু করে এখন তারা জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ৪০ বিঘা জমিতে এ বছর পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন।

লাভলি আক্তার বলেন, ‘বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে দেখি শ্বশুর বাড়ির লোকেরা পেঁয়াজ বীজের চাষ করছেন। তিনিও স্বামীকে সহায়তায় নামেন। এতে প্রথম বছরেই ভালো আয় হয়। এরপর আর থেমে থাকেননি।’

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বরাবরই ফরিদপুরের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজের আবাদের উপযোগী হওয়ায় এখানে বীজের ব্যাপক আবাদ হয়। মূলত ফরিদপুরে ৩ ধরনের পেঁয়াজ আবাদ হয়।’

বীজ চাষিরা বলেন, এ বছর মৌমাছির অভাবে এই পেঁয়াজ বীজের গাছে পরাগায়নের মাত্রা কমে এসেছে। নিরুপায় কৃষক হাতের তালু বুলিয়ে এক ফুলের রেণুর সাথে আরেক ফুলের রেণুর পরাগায়নের পন্থাও বেছে নেন অনেকে। কিন্তু এতে প্রাকৃতিক পরাগায়নের মতো ভালো ফলন হয়নি। আর তাই গত বছরের চেয়ে কিছু বেশি জমিতে চাষ হলেও এবার গতবারের চেয়ে উৎপাদন কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সুযোগে ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানির আশঙ্কাও রয়েছে। তবে কৃষকরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি করা হলে তা সার্বিকভাবেই ক্ষতি ডেকে আনবে।

পেঁয়াজ বীজ আবাদে যত্নশীল থাকতে হয়। কোন রকম অযত্ন হলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষেতে বীজের আবাদ শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরে আর ফলন পাওয়া যায় এপ্রিল-মে মাসের দিকে। ক্ষেত থেকে তোলার পর একবছর এই বীজ সংরক্ষণ করতে হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দাম ভাল পাওয়ায় এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে জেলার কৃষকরা এবার সাড়ে ৭ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করবে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর