বিশ্ববাণিজ্য আর বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন টিকে আছে লোহিত সাগরের ওপর। তাই লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা প্রভাব ফেলেছে তেলের দামসহ পুরো বিশ্ববাণিজ্যে। সুয়েজ খালের মাধ্যমে লোহিত সাগর যুক্ত হয়েছে ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে। হামলার জেরে বিকল্প পথ হিসেবে বেশিরভাগ জাহাজ বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্তের কেপ অব গুড হোপ দিয়ে ঘুরে দীর্ঘ পথে যাওয়ায় বাড়ছে পণ্য পরিবহনের সময়, খরচ এবং জাহাজ সংকটে বন্দরে বাড়ছে পণ্যজট।
জাহাজ সংকটে বন্দরে দেখা দিচ্ছে পণ্যজট। ছবি: এখন টিভি
সুয়েজ খাল হয়ে গেল বছর নভেম্বরের তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারিতে তেলবাহী ট্যাঙ্কারের যাতায়াত কমে গেছে ২৩ শতাংশ। জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য পণ্য দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে যাওয়ায় বাড়তি সময় গুণতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৪ দিন। খরচও বেড়ে গেছে ৩০ শতাংশ।
এশিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে ইউরোপে জাহাজে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়তে শুরু করে গেল অক্টোবরে ইসরাইল-হামাস সংঘাত শুরুর সময় থেকেই। এখন অন্যান্য বাণিজ্যিক নৌ-পথেও এর প্রভাব পড়ছে, সব মিলিয়ে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে শঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ছবি: এখন টিভি
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক আর্থিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোহিত সাগরে নিরাপত্তা স্থিতিশীল না হলে এবং নৌ-পথে পণ্য পরিবহণ খরচ বাড়তে থাকলে বিশ্বজুড়ে শুধু নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্যস্ফীতিই বেড়ে যাবে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ।
হুতিদের হামলা ঠেকাতে এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি চীনের কঠোর অবস্থান বিস্মিত করেছে হামলায় উল্লেখযোগ্য রকমের ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে। পশ্চিমা আধিপত্যের বিপরীত অবস্থানে মিত্র চীন ও ইরান। ইরান সমর্থিত হুতিরা লোহিত সাগরে হামলা অব্যাহত রাখলে তা বেইজিং ও তেহরানের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে হুঁশিয়ার করেছে চীনা সরকার।
বিকল্প পথে বাণিজ্য, কূটনীতি, হুতিদের আস্তানায় যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য ও মিত্র দেশগুলোর সমন্বিত হামলাসহ নানাভাবে হুতিদের হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করছে বিভিন্ন দেশ। তবে এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো কার্যকর সমাধান।
প্রায় চার মাস ধরে লোহিত সাগরে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নৌ-পথে পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে অর্ধশত হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধের লক্ষ্যে ইসরাইলের ওপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে এ পথ বেছে নেয় ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটি। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে হামলা থেকে বাদ পড়েনি ইরানগামী জাহাজও।