আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

দেশে বছরে ৪০০ কোটি কেজি সুতা উৎপাদন

স্পিনিং মিল থেকে চাহিদার সিংহভাগ আসছে

দেশে প্রতিবছর ৪০০ কোটি কেজি বা প্রায় ২ কোটি বেল সুতা উৎপাদন হচ্ছে। যা দেশীয় পোশাক শিল্পের প্রায় ৮০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে। তুলার চাষ বাড়ানো গেলে দেশীয় সুতা দিয়েই শতভাগ চাহিদা পূরণ সম্ভব।

আমাদের দেশে যে তুলা উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। কারণ, শিমুল তুলার যে ঘনত্ব থাকে তা দিয়ে গুণগত মানের সুতা উৎপাদন করা যায় না। আজ আমরা তুলা থেকে সুতা উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া জানবো।

ওয়্যার হাউজ থেকে ব্লো রুমের রিটার মেশিনে সারিবদ্ধভাবে তুলা যাচ্ছে। যেখান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তুলাগুলোকে বাছাই করে ময়লামুক্ত করা হয়। এই ব্লো রুমেই তুলা থেকে সুতা উৎপাদনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে।

কার্ডিং ধাপের এই প্রক্রিয়ায় তুলার ব্লক বা ক্লাম্প ভেঙে আলাদা হয় একেকটি ফাইবার। তুলাকে সুতার আকার দেয়ার জন্য ফাইবারগুলোকে সমান্তরালে নেয়া হয়। যেগুলোকে ড্রয়িং প্রক্রিয়ায় নেয়ার জন্য দড়ির মতো কুন্ডলী পাকিয়ে সিলভার ক্যানে রাখা হয়।

ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের এজিএম মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘কটনকে প্রথমে পরীক্ষার মাধ্যমে শুরু করি, পরে ইয়ার্নকে পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ করি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ল্যাব কোয়ালিটি নিশ্চিত না করে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সুতা বাজারজাত করা হয় না।’

এই ধাপে তুলাকে সুতার প্রাথমিক আকার দেয়া হয়। চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার আগের এই ধাপের মাধ্যমে তুলার বড় স্লাইভারকে রিংয়ে নেয়া হয়। তার জন্য সিম্পেলক্স মেশিনে কুন্ডলী পাকানো তুলাকে নির্দিষ্ট পাকে ঘুরিয়ে ববিনে নেয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়া এখানে ড্রাফটিং, টুইস্টিং ও উইন্ডিং প্রক্রিয়ায় শেষ হয়।

ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সুতার নির্দ্দিষ্ট আকার দেয়া হচ্ছে এই ধাপে। এখানে ববিন থেকে সুতা যায় রিং ফ্রেমে, এরপর ২৪, ২৬, ৩০ ও ৩৪ কার্ডেডসহ নির্দিষ্ট আকারে আনা হয় সুতাগুলোকে। এরপর ফিনিশিং ধাপ পেরিয়ে প্যাকেজিংয়ের জন্য সুতা 'কোন' এ সংরক্ষণ করা হয়।

ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের জিএম মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সব ধাপের কাজ সঠিকভাবে করার মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিকমানের সুতা উৎপাদন করি।’

তৈরি পোশাক শিল্পে শুধু নিটওয়্যারেই প্রায় ৯০ শতাংশ আর ওভেন পোশাকে প্রাায় ৪০ শতাংশ সুতার যোগান দেয় স্থানীয় এসব স্পিনিং মিলগুলো। সবমিলিয়ে পোশাক শিল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ সুতার চাহিদা পূরণ হয় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে।

গেল অর্থবছরে ৩১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা খরচ করে ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৬ টন সুতা আমদানি করে বাংলাদেশ। সুতার উৎপাদন ও তুলা চাষ বাড়াতে আন্তঃমন্ত্রণালয় দ্বন্দ্ব নিরসনের তাগিদ দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে যদি তুলার উন্নয়ন করা যায়, তাহলে এক মিলিয়ন মানসম্মত তুলা উৎপাদন সম্ভব হতো। আর এটি আন্তঃমন্ত্রণালয় দ্বন্দ্বের কারণে সম্ভব হচ্ছে না।

উৎপাদনের শেষ পর্যায়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ওজন পরিমাপের পর সুতা প্যাকেটজাত করে গুদামজাত বা বিক্রয়ের জন্য গাড়িতে তোলা হয়।