অর্থনীতি
0

তিস্তা ঘিরে মহাপরিকল্পনা ঝুলছে ৮ বছর

শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে খাঁ খাঁ কিন্তু বর্ষা নামলেই উজানের পানির চাপে তিস্তা ভয়াল রুপ ধারণ করে। আকস্মিক বন্যা, খরা, ভাঙনসহ নানাভাবে ক্ষতি অন্তত ১ লাখ কোটি টাকার সম্পদ। অথচ এই নদী ঘিরে মহাপরিকল্পনা ঝুলে আছে প্রায় আট বছর ধরে।

নীলফামারী থেকে সওয়ার হয়ে তিস্তা কুড়িগ্রামে ছুটেছে। মাঝে রংপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা ছুঁয়েছে। ধারণা করা হয় তিস্তার এ পথ ২৩৫ বছরের পুরনো। দীর্ঘ এ সময়ে খরস্রোতা এ নদীকে কেন্দ্র করে অন্তত ২৫ টি শাখা নদীর জন্ম হয়েছে। সে হিসেবে তিস্তাকে উত্তরের নদ নদীর জননী আখ্যা দিলেও ভুল বলা হবে না।

তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের জীবনরেখা হিসেবে ইতিহাসে তিস্তার সুনাম আছে। তবে তিস্তা যা দিয়েছে এ জনপদের মানুষকে তার চেয়ে আগ্রাসী হয়েছে বেশি। এক তিস্তার বহুরুপ উত্তরাঞ্চলের কয়েক প্রজন্ম দেখেছে।

নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া পীরগাছা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ কুড়িগ্রামের রাজাহাট, উলিপুর ও চিলমারী, উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহমান এই তিস্তা নদী।

আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ২০১৪ সাল থেকে ভারত একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহার করছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি তিস্তা নদীবেষ্টিত হওয়ায় শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষকে বেশি খেসারত দিতে হয়।

এ নদী নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ডামাডোল অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে বাজলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

তিস্তা এলাকার বাসিন্দারা বলেন, 'বাস্তবায়ন হলে এলাকা অনেক উন্নত হবে।  বেকারদের কাজের সুযোগ এবং শিল্প কারখানা হবে। এখানে স্কুল-কলেজ, ইপিজেট হবে। এমপি সাহেবরা বলেছে নদী নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করবে।'

তিস্তা মহাপরিকল্পানার আওতায় নদীর ১০৮ কিলোমিটার খনন করে গভীরতা বাড়ানো হবে প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত। সারাবছর নৌ চলাচলের মতো পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া দুই পাড়ে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা ও চর খনন করে নদীর দুই ধারে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনায় আছে বালু সরিয়ে উদ্ধার করা হবে কৃষি জমি। ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করে বছরে উৎপাদন করা যাবে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল। আর নদী ঘিরে স্থাপন হবে নৌবন্দর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই পাড়ে বসবে থানা, থাকবে কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনীর জন্য নির্মাণ হবে ক্যাম্প।

বিষদ উন্নয়ন পরিকল্পনায় নদী খনন, শাসন ও ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকবে। আধুনিক কৃষি সেচ ব্যবস্থা তো থাকবেই। এছাড়াও হবে মাছ চাষ প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার ৭ থেকে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রংপুর -১ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, 'মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য বিষয়টা ( সংসদে) তুলবো। সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলটা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা থাকবে। যেহেতু আগে এটা এখানে ছিলো।'

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, 'তিস্তা মহাপ্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য আপনারা কাজ করবেন। আমি আশা করবো প্রথম অধিবেশনেই একসাথে সবাই এই দাবিটা তুলবেন এবং তিস্তাপাড়ের মানুষ আপনাদের সাথে থাকবে।'

এদিকে তিস্তাকে ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের আগ্রহ ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতিতে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি সরগরম হলেও নির্বাচন পরবর্তী তিস্তা ঘিরে মহাপরিকল্পনা এখন রংপুরের মূল আলোচ্য বিষয়।

নদী গবেষক  তুহিন ওয়াদুদ বলেন, 'আমরা মনে করি আইনি প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে কূটনৈতিক তৎপরতা চলতে থাকবে। সাধারণ মানুষের চাপ তৈরি করে নিজ দেশিয় ব্যবস্থাপনায় তিস্তা নদীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।'

বহমান এ তিস্তার মিলন হয়েছে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। আর ব্রহ্মপুত্রর মিলেছে যমুনায়, তারপর পদ্মা নাম ধারণ করে মিশেছে সমুদ্রে। কিন্তু তিস্তা পাড়ের মানুয়ের ছুটে চলার পথ কেবলমাত্র বসতভিটা আর তিস্তায় জেগে উঠা চরের কৃষিজমি। ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূল্যের তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামক সোনার হরিণের দেখা কবে মিলবে, সে প্রতীক্ষায় দিন শেষ হয় এ অববাহিকার কোটি মানুষের।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর