ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

কৃষক আন্দোলনে অচল ফ্রান্স মহাসড়ক

ইউরোপজুড়েই কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ

কৃষক আন্দোলনে বিপাকে ইউরোপের দুই দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি। জ্বালানির দামে ভারসাম্য, সুষ্ঠু কৃষিনীতি ইত্যাদি নিয়ে ক্ষোভ আন্দোলনকারীদের।

বিভিন্ন কৃষক ইউনিয়নের সড়ক অবরোধের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুক্রবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসকে চতুর্দিক থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন ৫৫ হাজারের বেশি কৃষক। সরকারকে চাপে ফেলতে স্পেন আর বেলজিয়াম সীমান্ত সংলগ্ন মহাসড়কও অচল করে দেয়া হয়। কম মজুরি, আমলাতান্ত্রিকতা, ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্যপণ্যের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে জাতীয় পর্যায়ে চলছে এ বিক্ষোভ।

বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, 'যে পেশায় আমরা আছি, সেখান থেকে কিছু করে খেতে চাই আমরা। জীবিকা উপার্জনের একমাত্র পথ এটা আমাদের জন্য। দিনের পর দিন কৃষি ব্যবসায়ীরা আমাদের পিঠে ছুরি বসাচ্ছে, আমরা অতিষ্ঠ।'

আরেকজন জানান, 'আমি ৪০ বছর ধরে কৃষিকাজ করছি। সপ্তাহে দুই ঘণ্টা করে আমার কাগজপত্র ঠিক করার জন্য প্রশাসনের অফিসে গিয়ে বসে থাকতে হয়। আর কতো? অনেক সহ্য করেছি। আর নয়, কারণ আমার কাজ ক্ষেতে, অফিসে নয়।'

কৃষকদের অসন্তোষ দূর করতে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাতিল, কৃষিবান্ধব নীতি প্রণয়নসহ শুক্রবার ১০টি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী। বিশ্লেষকরা বলছেন, সমস্যা অনেক। কিন্তু কৃষকদের প্রধান উদ্বেগ আয় বৃদ্ধি নিয়ে।

প্যারিসের ডফিন ইউনিভার্সিটি'র অর্থনীতিবিদ ফিলিপ শালমিন বলেন, 'ইউরোপের আরও অনেক দেশের চেয়ে আমাদের অবস্থা আলাদা নয়। এখানে সরকারের কথা বলার খুব একটা জায়গা নেই। সরকারের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে, বিষয়টা এতোটুকুই। কিন্তু এই দাম তো শুধু উৎপাদনকারী বা খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল না। ইউরোপ আর বিশ্ববাজারের ওপরও অনেককিছু নির্ভর করে। বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্যের দামে অস্থিরতার ভুক্তভোগী ক্ষুদ্র কৃষকরা।

একই দিন জার্মানিতে কৃষিখাতে ডিজেলে শুল্ক ভর্তুকি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন কৃষকরা। রাজধানী বার্লিনে সরকারের সহযোগী দল গ্রিন পার্টির প্রধান কার্যালয়ের সামনে ট্রাক্টর নিয়ে জড়ো হন তারা। একদিন আগে মেইঞ্জ শহরে জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রীর সফরের সময় সেখানেও চলছিল আন্দোলন। রোববার পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে চলবে এ আন্দোলন।

বিক্ষোভকারীরা জানান, 'খুব খারাপ পরিস্থিতিতে আছি আমরা। চারদিকে এতো সমস্যা যে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এভাবে চলা যায় না। একজনই সব পাবে, আর যাদের প্রয়োজন, যাদের যোগ্যতা আছে- তারা কম পাবে, এভাবে চলতে পারে না।'

এর আগে কৃষিবান্ধব পরিস্থিতির দাবিতে বেলজিয়াম, পোল্যান্ডেও জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলন করেন কৃষকরা। দাবানল, ঝড়-বন্যা, তুষারপাতের তীব্রতাসহ জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফল নানাভাবে ভোগ করছে ইউরোপ। এমন পরিস্থিতিতে পক্ষপাতদুষ্ট ও সাংঘর্ষিক কৃষি নীতির কারণে কয়েক বছর ধরেই ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কৃষকদের।