আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

২০২৩ সালে দেশে চা উৎপাদনে রেকর্ড

চট্টগ্রাম

প্রথমবারের মতো ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। চা শিল্পের ১৭৫ বছরের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড। এছাড়া ২০২৩ সালে রপ্তানিও বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

দৈনিক ১০ কোটি কাপ চায়ে চুমুক দেন ভোক্তারা। ট্রি ট্রের্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের এই হিসেব বলে দিচ্ছে চায়ের নেশায় বুদ অনেকেই।

২০২১ সালে ১শ' ৬৮টি চা বাগান ও ছোট ছোট বাগান থেকে সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। যদিও বিরূপ আবহাওয়া ও শ্রমিক ধর্মঘটে পরের বছর কমে যায় ফলন এবং ২০২২ সালে উৎপাদন ৯ কোটি ৩৮ লাখে কেজিতে ঠেকে। গেল কয়েক বছরে চা বোর্ড ১০০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও পূরণ হয়নি। অবশেষে বিদায়ী বছরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের রেকর্ড করলো বাংলাদেশ। চূড়ান্ত হিসেব না হলেও চা বোর্ড বলছে ২০২৩ সালে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হবে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন উন্নত জাতের চারা, সেচ ব্যবস্থার পাশাপাশি চা শিল্পে বিপুল অংকের কর্পোরেট বিনিয়োগে হয়েছে। সেই সঙ্গে চা বোর্ডের বিভিন্ন পদক্ষেপেও বেড়েছে উৎপাদন। ২০২৫ সালে ১৪ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য চা বোর্ডের।

চা উৎপাদনের চিত্র

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'বিদেশি মার্কেট যদি ধরতে চান তাহলে মান বাড়াতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা প্রথমবারের মত টি টেস্টিং এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল কোর্স চালু করেছি।'

বিদায় বছরে বেড়েছে চা রপ্তানিও। ২০২২ সালে ৭ লাখ ৭৮ হাজার কেজি চা রপ্তানি হলেও ২০২৩ এ রপ্তানি হয়েছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার কেজি চা।

কিন্তু নিলামে চায়ের দাম ও বিক্রি কমায় দুশ্চিন্তার ছাপ চা বাগান মালিক ও কর্মকর্তাদের। চলতি মৌসুমে ৩৭ তম নিলাম পর্যন্ত চা বিক্রি হয়েছে ৭ কোটি ১৭ লাখ লাখ কেজি। যা ২০২২ সালের চেয়ে সাত লাখ কেজি কম। সেই সঙ্গে নিলামে চায়ের দাম কমেছে কেজিতে গড়ে ৫০ টাকা। ২০২২ এ নিলামে গড়ে ১৯৬ টাকায় চা বিক্রি হলেও চলতি মৌসুমে বিক্রি হচ্ছে গড়ে ১৪৩ টাকায়। এতে চা বাগানগুলো লোকসানে পড়েছে। এজন্য উত্তরবঙ্গের নিম্নমানের চা এবং চোরাই পথে প্রতিবেশ দেশ থেকে চা আসাকে দায়ি করছেন বাগান সংশ্লিষ্টরা।

চৌধুরী চা বাগানের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'উৎপাদন খরচ থেকে বিক্রয়মূল্যটা অনেক কম। বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশে চা আসছে। এটার একটা প্রভাব পড়ছে।'

যদিও চা প্যাকেটিয়ার্সরা বলছেন করোনার পর থেকে চা পানের ট্রেন্ড পরিবর্তন এবং দুধ-চিনির দাম বাড়ায় ভোক্তারা এখন লিকার চা বেশি পান করছেন। ফলে অভ্যন্তরীন চাহিদা কমায় কমেছে চায়ের দাম ও বিক্রি। তবে নিলামে নিম্নমানের চায়ের সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম পড়তির দিকে বলে মত ট্রি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের।

সূত্র চা বোর্ড

ড্যানিশ ফুডস লিমিটেডের চা প্রকল্পের মহা-ব্যবস্থাপক খাদেম মোহাম্মদ সায়েম বলেন, 'আগে ৫ টাকা দিয়ে এক কাপ চা বিক্রি হতো। এখন ৮ থেকে ১০ টাকার কমে চা পাওয়া যায় না। চিনি, কনডেন্স মিল্ক ও দুধের দাম নি:সন্দেহে একটা বিষয়।'

টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, 'চায়ের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। চা বিক্রি হচ্ছে না। এখন চায়ের কোয়ালিটিও খারাপ, দামও কম।'

এক্ষেত্রে রপ্তানির বাজারে টিকে থাকতে উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চায়ের গুনগত মান বাড়ানোর তাগিদ তাদের।

এক সময় মোট উৎপাদনের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ চা রপ্তানি হতো। ২০০২ সালেও প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ কেজি রপ্তানি হয়।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর