বাজার
দেশে এখন
0

মূল্যস্ফীতির চাপে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে

বিদায়ী বছরে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির চাপে বেড়েছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম

মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী হলে ছোট হয়ে আসে খরচের ফর্দ। হালকা হতে শুরু করে বাজারের ব্যাগ। সাধ আর সাধ্যের ভারসাম্য মেলাতেই ভোক্তার হিসাব-নিকাশ শুরু হয়। তবুও কী দৈনন্দিন হিসাবের খাতা মেলে? মিল-অমিলের এই যাঁতাকলেই ভোক্তার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে যোগ হয় বাড়তি দীর্ঘশ্বাস।

দাম বাড়ুলেও নিত্যপণ্য কিনতে বাধ্য হন ক্রেতারা। অন্তত দুবেলা আহারের জন্য হলেও নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তকে চাল-ডাল-তেল-আলু-সবজি কিনতেই হয়। কিন্তু ভরা মৌসুমেও আলু এবং শীতকালীন কিছু সবজি নাগালের বাইরে। বছরজুড়ে অস্থির ছিল পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিমসহ নানা পণ্যের বাজার। নির্ধারিত দর বেঁধে দিয়েও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা।

ক্রেতারা বলেন, কাঁচাবাজারে যদি এমন চড়া দাম হয় তাহলে অন্যান্য খুচরা মুদি বাজারের কী হবে? সরকার চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হয়েছে ২০২৩ সালে। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানা কিংবা নিত্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বদ্ধপরিকর সরকার। যার প্রমাণ মিলেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। নির্বাচনী ইশতেহারে যে ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তার মধ্যে তালিকার শুরুতেই স্থান পেয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।

এই খবরে ভোক্তাও আশায় বুক বাঁধছেন। তাদের চাওয়া নতুন বছরে নতুন সরকার ইশতেহার বাস্তবায়নে রাখবে কার্যকর ভূমিকা।

ভোক্তারা বলেন, সরকার খুব ভালো করেই জানে প্রতিটা লোকের কত খরচ হচ্ছে আর কেমন আয় হচ্ছে। ২০ টাকা আলু আর ৪০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ থাকলে খুবই ভালো হয়।

রমজান আসন্ন, এই মাসকে ঘিরে ছোলা, খেজুর, আটা, ময়দা, বেসনসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। রমজান আসতে মাস দুয়েক বাকি থাকলেও এরই মধ্যে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কেজিতে ছোলার দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। কেজি প্রতি খেজুরের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। বুটের ডাল ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা কেজি। আর বেসনের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা করে। রোজার আগেই দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি ক্রেতাদের। আর বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি করা পণ্যে শুল্ক কমানো হোক।

খেজুর বিক্রেতারা বলেন, কাস্টমাররা খেজুরের দাম বেশি শুনে অনেকেই না কিনে চলে যাচ্ছে। যারা ১ কেজি খেত তারা হাফকেজি খাচ্ছে। যদি সরকার ট্যাক্স কমিয়ে দেয় তাহলে তাদের খেতে সহজ হবে।

ক্রেতারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম দিন দিন বাড়ছে কিন্তু কমছে না। সেক্ষেত্রে কী হবে তা বুঝতে পারছি না।

ভরা মৌসুমেও নাগালের বাইরে এসব শীতকালীন সবজি

বিবিএস'র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১২.৫৪ শতাংশে। যা ২০২২ সালের আগস্টে ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। একইভাবে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৩৭ শতাংশ, ২০২২ সালে ছিল ৯.০৮ শতাংশ। অক্টোবরে এসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১২.৫৬ শতাংশ। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয় ১০.৭৬ শতাংশ, ২০২২-এ যা ছিল ৮.১৪ শতাংশ।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, মূল্যস্ফীতি কমানো বা ভোক্তার অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তাদের দাবি, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও তার প্রভাব পড়েনি দেশের বাজারে। বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতিকে অজুহাত বানিয়ে ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে ব্যবসায়ীরা। নতুন সরকারের সদিচ্ছা ও ক্ষেত্র বিশেষে কঠোর পদক্ষেপই এই অস্থিরতা কাটাতে পারে।

ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, 'খেজুর, ডাল আর ছোলা এগুলোর দাম এখন বিশ্ব বাজারে বেশি না। তাই সরকারের এই মুহূর্ত থেকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। রমজানের ১৫ দিন আগে নয়, এখন থেকেই বাজার মনিটরিং করা উচিত।'

মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় দুর্বল হয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন বাড়ানো এবং সরবরাহকে নির্বিঘ্ন করার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের। ঊর্ধ্বগতির এই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা নতুন বাণিজ্য মন্ত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন তারা।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, 'প্রথমত উৎপাদন এবং বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত বাজারের যে সিন্ডিকেট ক্রেতাদের কাছ থেকে অযাচিত মুনাফা আদায় করছে তাদেরকে দমিয়ে দিতে হবে। আর এটা করতে হলে বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।'