রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দেশের পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। জিডিপির প্রায় ১৬ শতাংশ আসে এই শ্রমিকদের হাত ধরে। যা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিও বটে।
মোট রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। যার সিংহভাগই রপ্তানি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। প্রধান ক্রেতা হিসেবে শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে সবসময় সোচ্চার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ গেল নভেম্বরে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ছিল তাদের হস্তক্ষেপ।
সেসময় পোশাকের শীর্ষস্থানীয় ১৫টি মার্কিন ব্র্যান্ড শ্রমিকদের উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছিল। প্রত্যাশিত মজুরি বাস্তবায়ন হলে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল ক্রেতারা। এতে সম্মতি জানিয়েছিল গ্যাপসহ বিশ্বের এক হাজারেরও বেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত বৈশ্বিক ক্রেতা সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিটেক্স ও এইচঅ্যান্ডএম।
এরপর পানি গড়িয়েছিল অনেক দূর। চরম শ্রমিক অসন্তোষের পর গত ২৬ নভেম্বর তৈরি পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্ত হয়। যা চলতি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সুইডিশ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান 'এইচঅ্যান্ডএম' ছাড়া কেউই কথা রাখেনি। চলতি অর্থবছরে নতুন করে মূল্য সমন্বয়ের কথা ভাবছে না অধিকাংশ ক্রেতা।
বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে তারা চিঠি দেয়। কিন্তু তারা কখনোই বলেনি যে তারা মজুরি বৃদ্ধি করলে পণ্যের দাম বাড়াবে। মূল্য বৃদ্ধি যদি না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তাদের সংগঠন কি পদক্ষেপ নেবে এমন কিছুই তারা উল্লেখ করছে না।’
বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমি তাদের মূল্য বাড়াতে বলেছি, আশা করছি তারা বাড়াবে। তবে আমাদেরও সঠিক থাকতে হবে, যাতে কেউ কম প্রাইজে কাজ না নেই।’
পোশাক উৎপাদনে মোট ব্যয়ের প্রায় ১০ থেকে ১৩ শতাংশই হয় মজুরি বাবদ। তাই নতুন মজুরি বাস্তবায়নের পর পোশাকের উৎপাদন ব্যয় ৫-৬ শতাংশ বেড়ে গেলে কমবে মুনাফার পরিমাণও। এদিকে প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না পোশাক উৎপাদন। ক্রয়াদেশের ভরা মৌসুমে সংকট দেখা দিয়েছে পোশাকের ফরমায়েশে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও মাসভিত্তিক হিসেবে কমেছে পোশাক রপ্তানি। যেখানে অক্টোবরে কমেছে ১৩ আর নভেম্বরে কমেছে ৭ শতাংশ।
বিকেএমইএ’র সহ সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, পরিস্থিতি গত এক বছর ধরেই খারাপ যাচ্ছে। কারণ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের পণ্য ক্রয় অনেকটাই কমে গেছে।’
এ অবস্থায় আগামী এপ্রিল পর্যন্ত পোশাকের ক্রয়াদেশে নেতিবাচক ধারা থাকবে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। তবে ক্রেতাজোট তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলেও সংকট কিছুটা কাটবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ নেতারা।
সস্তা শ্রম আর সস্তায় পোশাক; বাংলাদেশকে বরাবরই এমন তকমা দিয়ে আসলেও পণ্যের ন্যায্য মূল্যের হিস্যায় কথা রাখছে না বিদেশি ক্রেতারা। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য দামের দাবি জানিয়ে আসলেও সাড়া পাচ্ছেন না। মজুরি বৃদ্ধির পর ক্রেতারা মূল্য সমন্বয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এখন তাদের অজুহাতের অন্যতম হাতিয়ার। নতুন মজুরি বাস্তবায়নের পরও তাই পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নেতিবাচক মত তাদের। ফলে নামি সব ব্র্যান্ড আর ক্রেতাদের এমন দ্বৈত আচরণ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান রপ্তানিকারকদের।





