রাজধানীর মতিঝিলের একটি ছোট দোকানে গিয়ে একটি পেঁয়াজু ভেঙে ভেতরে পেঁয়াজের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেলো না। এমন কাণ্ডে দাম বৃদ্ধির জন্য শুধু আলু ব্যবহারের দাবি করছেন বাবুর্চিরা।
তারা জানান, ‘কিভাবে পেঁয়াজ দিবো? বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা।’
তাহলে সাধারণ মনুষের সাথে কেন এই প্রতারণা? নাম পেঁয়াজু কিন্তু তৈরি হচ্ছে আলু দিয়ে। পেঁয়াজুর দাম বৃদ্ধি করেও তো পেঁয়াজ দেয়া যেত তার উত্তরে দোকানিরা জানান, একটি পেঁয়াজু ১৫/২০ টাকা বিক্রি করলে আমাদের কিছুটা লাভ হবে। কিন্তু একটা পেঁয়াজু ১৫/২০ টাকা দাম চাওয়া হলে তো বিক্রিই হবে না। তাই দাম ৫ টাকা রেখে শুধু আলু দিয়েই পেঁয়াজু তৈরি করছি।’
এতদিন সিঙ্গারা সাথে সালাদ হিসেবে পেঁয়াজ দেয়া হলেও এখন শুধু মরিচ আর সস। ছোলা বুটের সাথে শুধু শসার সালাদ।
একই অবস্থা রাজধানীর অধিকাংশ পথের ধারের ভাঁজা পোড়ার দোকানের। কেউ কেউ আবার মান, স্বাদ আর সুনাম ধরে রাখতে পেঁয়াজের ব্যবহার করছেন আগের মতোই।
এসব দোকানের মালিকরা বলেন, ‘সুনাম ধরে রাখতে একটু লোকসান হলেও চালিয়ে নিতে হচ্ছে। তবে পেঁয়াজের পরিমাণ আগের থেকে একটু কমিয়ে দিয়েছি।’
মাটির চুলায় রান্না আর ভিন্ন স্বাদের কারণে তেঁজগাওয়ের হোটেল জয়নাল সুনাম কুড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপে কম দামের হোটেল জয়নাল আগেই দাম বাড়িয়েছে খাবারের। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে এখন আর দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই তাই কমিয়েছেন পেঁয়াজের ব্যবহার।
হোটেল জয়নালের মালিক বলেন, ‘যেখানে ২০ কেজি পেঁয়াজ লাগতো সেখানে এখন ১৫ কেজি ব্যবহার করছি। এতে স্বাদ একটু কমে গেছে, ফলে ক্রেতাও কমেছে।’
দীর্ঘদিন যারা এই দোকানের নিয়মিত গ্রাহক তারা বলছেন আগের মতো আর স্বাদ নেই খাবারে।
একই অবস্থা তেঁজগাওয়ের মধ্য ও নিম্নবিত্তের অধিকাংশ দোকানে। বাজার অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব পেঁয়াজের ব্যবহার। তবে এ জন্য সকলের সহযোগিতা দরকার।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতিদিন ৮ হাজার টন পেঁয়াজ ব্যবহার করি আমরা। বর্তমান এর বাজার মূল্য ১৬০ কোটি টাকা। এখন যদি চাহিদা আমরা অর্ধেক কমিয়ে দিতে পারি তাহলে প্রতিদিন ৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’
সামনে পেঁয়াজের মৌসুম। তাই অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পেঁয়াজের ব্যবহার কমনোর অনুরোধ বাজার অর্থনীতিবিদদের। তাতে একদিকে যেমন জীবনযাপন খরচ কমবে অপরদিকে বেঁচে যাবে দেশের অর্থ।