বাজারে প্যাকেটজাত খাদ্য পণ্যের বেশ জনপ্রিয়তা থাকলেও এর মান নিরুপণের সনদ নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কারণ বিএসটিআইয়ের সনদ পাওয়া তালিকাভুক্ত ২৭৩টি পণ্যের মধ্যে রুটি এবং মধু ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেটজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ থাকলেও, রুটির সাথে মধু মিশ্রিত পণ্যের নাম পাওয়া যায়নি। তবুও প্যাকেটের গায়ে বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত লোগো রয়েছে। কিন্তু কেন?
বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য বাজারজাত করলেও বিএসটিআইয়ের অনুমদিত লোগো পাওয়া গেছে শুধুমাত্র আকিজ বেকার্স ও মেঘনা গ্রুপের পণ্যে। নিজ উদ্যোগেই তারা বিএসটিআইয়ের মান সনদ নিয়েছেন বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
বাজারে এমন অনেক জনপ্রিয় পণ্য রয়েছে যেগুলোর বিএসটিআইয়ের কোন সনদ নেই। তেমনই একটি জনপ্রিয় পন্য ঝালমুড়ি। বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত পণ্যতালিকার মধ্যে চানাচুর ও মুড়ি আলাদাভাবে সনদ পেলেও একসাথে প্যাকেটজাত চানাচুর ও মুড়ির নাম নেই। দেশের নামি প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য বাজারজাত করলেও মান নিরুপণে বিএসটিআইয়ের নেই কোনো উদ্যোগ।
বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত পণ্যের সংখ্যা ২৭৩টি। এর মধ্যে খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যের সংখ্যা ১০০টি। যেখানে স্থান পায়নি বাজারে প্রচলিত আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও সেবা। সেসব পণ্যের মান নিয়ে বিএসটিআইয়ের যেমন মাথাব্যাথা নেই, তেমনি অনুমোদনহীন লোগোর বিরুদ্ধেও নেই দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ।
১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের জারিকৃত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন অধ্যাদেশ ৩৭ এর মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বিএসটিআই। পণ্য ও সেবার মান প্রণয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মানদণ্ড নিরুপণে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশে ২ হাজারের বেশি অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে ৩ হাজার মামলার পাশাপাশি জরিমানা আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বেশি। তবে সারাদেশে কার্যক্রম বাড়ানোর ক্ষেত্রে জনবল সংকটকে দায়ী করছেন বিএসটিআই চেয়ারম্যান।
ইপিবির তথ্য বলছে, গেল অর্থবছরে ৮২ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে প্যাকেটজাত এসব খাদ্যপণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৯ কোটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার। তবে এসব পণ্যের মান যাচাইয়ে বিএসটিআইয়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিএসটিআইয়ের মতো সংস্থার জনবল ও ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত দেন তারা।
এছাড়া, বাজার ব্যবস্থাকে উন্নত ও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনার তাগিদও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।