৩৫০০ বছরের পুরনো মেগালিথিক স্থাপনা জৈন্তাপুরে

শাহনুর শাকিব
সিলেট
0

প্রস্তর যুগের স্থাপনার মধ্যে অন্যতম মেগালিথিক স্থাপনা। দেশের একমাত্র মেগালিথিক স্থাপনা দেখতে পাওয়া যায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায়। দখল, দূষণ আর সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে প্রায় ৩৫০০ বছর আগের এই স্থাপনাগুলো।

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু।

কবিগুরুর এই লেখা গুলোর মতোই বাংলাদেশের অনেক মানুষ পুরাকীর্তি দেখার জন্য দেশের বাইরে গেলেও দেশের পুরাকীর্তি সম্পর্কে জানেন না অনেকেই।

মেগালিথ শব্দটা এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে। মেগা অর্থ মহান, লিথ মানে পাথর- যার অর্থ দাঁড়ায় 'মহান পাথর'। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সময়কালে মানুষের তৈরি স্থাপনাকেও মেগালিথ বলে অভিহিত করা হয়। এইসব পাথরের নির্মাণ শুরু হয়েছিল নব্য প্রস্তরযুগ এবং চলছিল তাম্রযুগ এবং ব্রোঞ্জ যুগ পর্যন্ত।

ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগালসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্থাপনা দেখতে পাওয়া গেলেও উপমহাদেশে এ ধরনের স্থাপনার প্রচলন কম। তবে ভারতের শিলং এর পাশাপাশি সিলেটের জৈন্তাপুরেও এই স্থাপনার স্মৃতিচিহ্ন এখনও বহমান। যা দেশের এক মাত্র মেগালিথিক সৌধ।

প্রত্নতত্ত্ববিদদের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই পাথরগুলোর বয়স সাড়ে ৩ হাজারের বেশি। জৈন্তা রাজবাড়ির আশপাশে এগুলো পাওয়া গেলেও বাস্তবিক এই স্থাপনা গুলো হাজার হাজার বছরের পুরনো।

জৈন্তাপুরে ডলমেন ও মেনহির দু'ধরনের মেগালিথিক স্থাপনা দেখতে পাওয়া যায়। কয়েক দশক আগেও অন্তত ৬১টি স্থাপনা থাকলেও ভূমি দখল ও অযত্নে এখন ধংসাবশেষ হিসেবে টিকে আছে কেবল ২০ থেকে ২৫টি।

সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জৈন্তা রাজবাড়ির সংস্কার কাজ শুরু করলেও মেগালিথিক এর দিকে নেই তেমন খেয়াল। কারণ হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম জানান, 'বাজেট স্বল্পতায় সবগুলো কাজ এক সাথে সম্ভব হচ্ছে না।'

দেশের এই প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে জানেন না বেশীরভাগ মানুষ। স্থাপত্য বিভাগে জৈন্তার এই মেগালিথিক নিয়ে একাডেমিক শিক্ষার সুযোগ থাকলেও স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমে নেই এর অন্তর্ভুক্তি। আগামী প্রজন্মকে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই স্থাপনাকে চেনাতে প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ।

বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট সিলেট সেন্টারের সদস্য সচিব স্থপতি রাজন দাস বলেন, 'আমাদের ইতিহস সম্পর্কে শুধু ৫০ বছরের ইতিহাস জানলেই হবে না। ৩ হাজার বছর আগের ইতিহাসের প্রমাণও আছে আমাদের এখানে ।'

জৈন্তা রাজবাড়ি আর জৈন্তার মেগালিথিক দুটি ভিন্ন সময়ের স্থাপনা। তাই এর সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে পর্যটকদের আগ্রহী করে তুলতে হলে প্রয়োজন প্রশাসনিক কার্যক্রম। যা পর্যটন শিল্প বিকাশে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যপূর্ণ এই সব স্থাপনাগুলো সঠিকভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা গেলে এতে যেমন বাড়বে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা, ঠিক তেমনি প্রচুর বিদেশি পর্যটক ও আসবে এসব স্থাপনা দেখতে। এতে বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে যেমনি পুরো বিশ্ব জানতে পারবে, ঠিক তেমনি এ দেশের পর্যটন খাত হবে আরও বেশি সমৃদ্ধ।

এসএস

আরও পড়ুন: