দেশের বেশিরভাগ ট্যানারির পরিবেশবান্ধব সনদ নেই। অথচ বিদেশি ক্রেতার শর্ত 'কমপ্লায়েন্ট ট্যানারি' থেকে সংগ্রহ করতে হবে কাঁচামাল। বাধ্য হয়ে রপ্তানিযোগ্য জুতা উৎপাদনের বেশিরভাগ চামড়াই এখনও বিদেশ থেকে আনতে হয়।
ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, দেশেই মানসম্পন্ন চামড়া উৎপাদন করা হলে বিশ্বে জুতা উৎপাদনে এক নম্বরে যেতে পারে বাংলাদেশ। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারিভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিজেদের উদ্যোগে করতে হবে 'বর্জ্য পরিশোধনাগার'।
সারাবিশ্বে বাড়ছে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা। বছরে বিশ্বজুড়ে চামড়াজাত পণ্যের গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ। বাংলাদেশে গত ৩ বছর ধরে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৯৬.৩৭ মিলিয়ন ডলার। তবে আলাদা করে কমেছে ফুটওয়্যারের রপ্তানি, শেষ অর্থ বছরে যার পরিমাণ ৫৩ মিলিয়ন ডলার।
গাজীপুরে অবস্থিত শতভাগ রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার ঘুরে দেখা যায়, এই কারখানায় একযোগে সাড়ে ৭০০ কর্মী কাজ করে। যাদের শ্রমে দিনে তৈরি হয় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার জোড়া জুতা। এই জুতা তৈরির প্রথম ধাপ কাটিং, চাহিদা অনুযায়ী পুরুত্ব ঠিক করাসহ কাটিং ও সুইং সেকশনে প্রস্তুত করা হয় জুতার ওপরের অংশ। আউটসোল, ইনসোল সেকশনে প্রস্তুত হয় জুতার নিচের অংশ। দুই অংশ জোড়া দিচ্ছে স্বয়ংক্রিয় মেশিন।
চামড়া থেকে ব্যবহার উপযোগী জুতা তৈরিতে অন্তত ৬টি ধাপ পার করতে হয়। যার প্রতি ধাপে রয়েছে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনের ব্যবহার, যা মান বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়িয়েছে উৎপাদন।
কর্মীরা বলেন, আমরা গ্রেডিংয়ের পর স্ক্যাবিং করি। এরপর সুইংয়ে চলে যায়। আধুনিক মেশিনে কাজ করায় উৎপাদন বেশি হচ্ছে।
উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুইশো’র অধিক মানুষের হাত দিয়ে চামড়া থেকে এক জোড়া জুতা হয়।
ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের ডেপুটি প্রোডাকশন ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মোবারক বলেন, আধুনিক মেশিনের ব্যবহার হওয়ায় আগের চেয়ে আমাদের পণ্যের মান অনেক বেড়ে গেছে।
ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের কারখানায় জুতা তৈরি হচ্ছে। ছবি: এখন টিভি
খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশে উৎপাদিত বেশিরভাগ চামড়া নিম্নমানের। চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কারো এলডব্লিউজি সনদ নেই। অথচ পাশের দেশ ভারতে ২২৪টি প্রতিষ্ঠানের সনদ রয়েছে। কাজেই রপ্তানিযোগ্য জুতা তৈরির ক্ষেত্রে চামড়ার জন্য বিদেশের উপর নির্ভর করতে হয়। এতে করে রপ্তানির গতি কমে যায়।
ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের পরিচালক (অপারেশন) মাহে আলম সম্রাট বলেন, দেশেই যদি গুণগত মানের কাঁচামাল উৎপাদন করতে পারি তাহলে আমরা জুতা উৎপাদনেও শীর্ষে অবস্থান করবো।
চামড়া প্রস্তুতকারকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার অকেজো থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারিভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিজেদের উদ্যোগে 'ইটিপি' করতে হবে।
শিগগিরই যশোরের দুইটি প্রতিষ্ঠান পেতে যাচ্ছে 'লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ' কিংবা 'এলডব্লিউজি' সনদ।