নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এই সময়ে সিলেটে লাখ লাখ পর্যটকের যাতায়াত থাকলেও এবারের চিত্র ব্যতিক্রম। হরতাল অবরোধের মতো কর্মসুচি থাকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সিলেটের পর্যটন খাতে।
সিলেটের জাফলংয়ের সুহেল নায়েক। শীলের উপর নানা কারুকাজ করে তিনি পাটাপুতা বিক্রি করেন গত ১০ বছর থেকে। পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তার এখান থেকেই পর্যটকদের কাছে এসব বিক্রি করে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা উপার্জন করতে পারেন তিনি। কিন্তু জানালেন বিগত ২ সপ্তাহ থেকে বেচাকেনা একদম শূণ্যের কোটায়।
সুহেল নায়েক বলেন, 'দুদিন খোলা রেখে পরের তিনদিন অবরোধের জন্য দোকান বন্ধ রাখতে হয়, এভাবে চলতে গিয়ে জাফলংবাসীদের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে।'
পর্যটক সংকটের কারনে সুহেল নায়েকের মতো সিলেট অঞ্চলের হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পড়েছেন সংকটে। একে তো নেই বেচাকেনা অন্যদিকে ধার দেনায় দাঁড় করানো ব্যবসায় টাকা শোধের তাগিদ। প্রত্যাশিত পর্যটক না আসায় নতুন করে বাড়ছে তাদের নানা সংকট।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ২ থেকে ৩ জন জানিয়েছেন, 'আজ ৪ দিন পর দোকান খুলেছি, এখানে বর্তমানে পর্যটকের চেয়ে দোকানদারের সংখ্যা বেশি। পর্যটক না আসায় কোনো বিক্রি নেই, যার কারণে কিস্তি পরিশোধ করতে পারছি না। সিলেটের স্থানীয় মানুষরা আসছেন, কিন্তু সিলেটের বাইরের কোনো পর্যটক নেই।'
লাগাতার অবরোধের কারণে সিলেটের হোটেল মোটেল এবং রিসোর্টসহ অনেক রেস্টুরেন্টগুলো প্রায় গ্রাহকহীন। নানা সুযোগ সুবিধা ঘোষণা করার পরও ভরা মৌসুমেও পর্যটক না আসায় চরম বিপাকে এ খাতে বিনিয়োগ কারীরা।
জাফলং গ্রিন রিসোর্ট এর ম্যানেজার পলাশ মিয়া জানান, 'আমাদের হোটেলে বুকিং সবসময় এক দুই সপ্তাহ আগেই হয়ে যেত, এখন অবরোধের জন্য একদম ফাঁকা থাকছে। করোনার সময় যেমন কেউ আসতো না, সেই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে শেষ কিছুদিন।'
জাফলং হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, 'সিলেটে আসলে ৩ থেকে ৪ দিন সময় দিতে হয়, কিন্তু হরতালের কারণে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে আসতে চায় না।'
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, 'নভেম্বর- ডিসেম্বরই মুলত পর্যটনের জন্য উপযুক্ত সময় । চলমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে এ খাতে আরো বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।’
সিলেট হোটেল ও গেষ্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি, এ টি এম শুয়েব জানান, 'বর্তমানে পর্যটকদের পছন্দের দ্বিতীয় স্থানে আছে সিলেট। এর সাথে সম্পৃক্ত পর্যটন স্থানগুলোর হোটেল, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ প্রত্যেকটি খাতে আমরা আগামী দুই মাস আলোর মুখ দেখবো না বলে মনে করি।'
সিলেটের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হলো পর্যটন খাত। করোনার সময়ে এই খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো তা কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীদের সময় লেগেছে দুই বছর। নতুন করে আবার দেশে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচির কারনে আবারও ক্ষতির শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন বিগত এক সপ্তাহে এই অঞ্চলে যে ক্ষতি হয়েছে তা যদি চলমান থাকে আগামী এক মাসের মধ্যে শতকোটি টাকার লোকসান গুণতে হবে তাদেরকে।