নাটোর সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের একজন নারী কৃষক জাহানারা বেগম। দুই সন্তানের জননী জাহানারার দিনের শুরু হয় একটু অন্যরকমভাবেই। সংসারের কাজ গুছিয়ে গ্রামের অন্য কৃষকদের সাথে তাকে খেতে ছুটে যেতে হয়। স্বামীর রেখে যাওয়া আড়াই বিঘা জমিতে বছরজুড়েই নানা ফসল ফলান। বাকি সময়ে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। এভাবেই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন কৃষক জাহানারা।
জমিতে কৃষিকাজে ব্যস্ত জাহানারা বেগম। ছবি: এখন টিভি
জাহানারার মতো হাজারও নারী কৃষকের পরিশ্রমে উত্তরের জেলা নাটোরের কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। তেমনি নাটোর সদর উপজেলার পূর্ব হাগুরিয়া এলাকার দম্পতি মোজাম্মেল হক ও মমতাজ বেগম। বয়সের বাঁধা অতিক্রম করে মমতাজ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে স্বামীকে সহযোগিতা করেন।
কৃষক মোজাম্মেল হক ও মমতাজ বেগম দম্পতি। ছবি: এখন টিভি
মমতাজ বলেন, 'বছরে তিনবার ফসল হয়। তিন ফসলের সময়ই সাথে থাকি। মানুষ নিয়ে ধান কাটলে তারা ধান কেটে ফেলে রেখে চলে যাবে। সেজন্য সব মিলে আমিই কাজ করি।'
আদিকাল থেকেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অবদান রাখছেন কৃষিতে। তবে দিনের পর দিন ধরে মজুরি বৈষম্যের কবলে নারী কৃষক ও শ্রমিকরা। দৈনিক মজুরি পুরুষের ৫০০ টাকা হলেও, নারীরা পান ৩০০ টাকা।
একজন নারী কৃষক বলেন, 'আমরা পুরুষের সমান কাজ করলেও আমি নারী বলে আমাকে কম বেতন দেয়। সরকার থেকেও কোনো অনুদান আমরা পাই না। ছেলেদের ৫০০ টাকা, মেয়েদের ৩০০ টাকা মজুরি। কিন্তু তাও দিতে চায় না।'
কৃষি বিভাগের হিসাবে, জেলার ২০ হাজার নারী জড়িত রয়েছেন কৃষিকাজে। আর জাতীয় কৃষি অর্থনীতিতে নারী কৃষকের অবদান অন্তত ২০ শতাংশ। তবে এখনো নারীর পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি কৃষি। যদিও দেশে দীর্ঘদিন পেশা হিসেবে নারী কৃষকের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাগুলো।
নাটোরের কসমস উন্নয়ন সংস্থা'র নির্বাহী পরিচালক মেহনাজ পারভিন মালা বলেন, 'নারীদের কৃষিকাজের স্বীকৃতি খুবই জরুরি। সে বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছি। তারা স্বীকৃতি পেলে কৃষিতে তাদের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।'
জেলায় প্রতিবছর সাড়ে ৬ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনে অনেকটাই নারী কৃষকদের অবদান। উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সঠিক প্রশিক্ষণে বাড়তে পারে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ। আর পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলে বাড়বে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা।