অর্থনীতি , গ্রামীণ কৃষি
কৃষি
৩৬ লাখ একর চরাঞ্চলের জমির ৩ ভাগই অনাবাদী
জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান তৃতীয় বৃহত্তম। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন শিল্প-কারখানা নির্মাণে জমি কমার সাথে জিডিপিতে এর অবদান দিন দিন কমছে। অথচ বিস্তীর্ণ অনাবাদি চরের জমিকে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির আওতায় এনে উৎপাদন বাড়ানো গেলে বিপুল অংকের টাকা আয়ের দ্বার খুলবে।

কৃষি গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের আয়তনের ১০ ভাগ চর, যা প্রায় ৩৬ লাখ একর। এর মধ্যে চাষাবাদের আওতায় এসেছে মাত্র ৯ লাখ একর। বাকি ২৫ লাখ একর অনাবাদী এবং পতিত পড়ে আছে। এসব চরগুলোতে এখনো তেমন কোন ফসল ফলানো হচ্ছে না। এর মধ্যে যে চরগুলি চাষাবাদের আওতায় এসেছে সেখানে ব্যবহার হচ্ছে না আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। উৎপাদিত ফসল বিক্রির সুব্যবস্থা নেই।

গাইবান্ধার বাজে ফুলছড়ি চরে ২ হাজার একর জমিতে ভুট্টা, পেঁয়াজ, পাট, ধান, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম চাষ হচ্ছে। কিন্তু এখানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় ও কম ফসল এবং সংরক্ষণে ব্যয় বাড়ছে। দিন মজুরের দাম বেশি হওয়ায় এবং ফসল বিক্রি করতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতেও খরচ পড়ছে অনেক। তাই চরবাসী চান আধুনিক কৃষি উপকরণসহ ফসলের সঠিক মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।

ফুলচরের এক চাষি বলেন, 'এক মণ বাদামের দাম হলো তিন হাজার টাকা। আর একই বাদাম শুকাইয়া বিক্রি করলে ১০ হাজার টাকা। সরকার এই বাদাম শুকানোর জন্য একটা মেশিন যদি দিতো তাহলে অনেক উপকার হতো। ৩০ মিনিটে ১০ মণ বাদাম শুকানো যায়।'

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর চরের চারিদিকে মরিচ ও ভুট্টার আবাদ। পাশের অনেক জমি অনাবাদি। পুঁজি ও সঠিক পরামর্শ না থাকায় পতিত পড়ে আছে জমিগুলো।

আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার শ্রম এবং খরচ উভয়ই সাশ্রয়ী। তাই বগুড়ার কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক সংগঠনও চায় চরবাসির চাহিদামত যন্ত্রপাতি তৈরি করে চরবাসীকে স্বল্প মূল্যে সরবরাহ করতে। ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস দেশিয় প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি অনেক সাশ্রয়ী এবং চরবাসীর ব্যবহার উপযোগী হবে।

কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারকরা বলেন, 'আমরা চরের মানুষদের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করছি। আগে যেগুলো চীন থেকে আমদানি করতে হতো; এখন সেগুলো বগুড়াতে তৈরি করে কৃষকদের দেয়ার চেষ্টা করছি।'

আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় এভাবেই জমিতে সেচ দিচ্ছেন চরের কৃষক...

কৃষি গবেষক এবং চরে কৃষি উৎপাদন নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তাদের দাবি জিডিপিতে বড় অবদান রাখতে পারবে চরের ফসল। তবে এ জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার এবং চরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন। চরবাসীর জন্য এসব নিশ্চিত করা গেলে খাদ্যে পুরোপুরি স্বয়ংসস্পন্ন হওয়ার সাথে জিডিপিতে কৃষির অবদান অনেকটা বাড়বে।

কৃষি গবেষক পল্লী উন্নয়ন একাডেমির ড.আব্দুল মজিদ বলেন, 'বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১০ শতাংশ জমি চর। যা প্রায় ৩৬ লাখ একর; তার মধ্যে মাত্র ৯ লাখ একর জমি আমরা চাষাবাদের আওতায় আনতে পেরেছি। যা মাত্র ২৫ শতাংশ। যদি বাকি ২৫ লাখ জমিতে উন্নত চাষাবাদ এবং কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানো গেলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।'

চরে জীবনযাত্রার মান কষ্টসাধ্য হলেও পলিপড়া চরগুলিতে সোনা ফলে। অধিক জনসংখ্যার এ দেশটিতে এখন চরের পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

এভিএস