বছরের এই সময়টাতে পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যশোরের গদখালির ফুলচাষিরা লাভের আশায় বুক বাঁধলেও হঠাৎ করেই অজানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গোলাপ গাছ। ডালপালা শুকিয়ে কলি ঝরে যাচ্ছে। তাই কৃষকের কণ্ঠে শুধু হাহাকার।
গোলাপ চাষিরা বলেন, 'সন্ধ্যার পর থাইকা কুয়াশা থাকে। তাই পাপড়িগুলো পচে যাইতাছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে চালানোর চেষ্টা করছিলাম, এখন পচে গেছে। ১৪ ফেব্রুয়ারিতে গোলাপের বাজার কেমনে ধরবো সেটা চিন্তা করতাছি।'
গদখালির নীলকন্ঠ নগরের ফুলচাষি রবিউল ইসলাম। ২ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষে ১ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করেছেন। গাছ পচে যাওয়াও তিনিও লোকসানে রয়েছেন। বলেন, 'আশা ছিলো ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার বেচাকেনা করবো। কিন্তু এখন তো দুইটাকাও পাবো না।'
প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে ফুলসহ নানা ফসলের ক্ষতি হয়। যা কাটিয়ে উঠতে ফুলচাষি নেতাদের শস্য বিমা চালুর দাবি।
গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, 'ফুলের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার যদি শস্য বিমা চালু করে তাহলে ফুলচাষি এবং ব্যবসায়ীদের সফলতা আসতে পারে।'
অতিরিক্ত কীটনাশক-সার ব্যবহারের পাশাপাশি কুয়াশার কারণে এমন অবস্থা দাবি করে কৃষকদের পরিমাণ মতো সুষম সার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ হোসেন পলাশ। বলেন, 'অতিরিক্ত সেচ, বৃষ্টির পানি এবং সার ব্যবহারের ফলে কিন্তু এই সমস্যাটা বেড়েছে। আমরা কৃষকদেরকে সুষম সার ব্যবহার করতে বলেছি।'
গোলাপে হতাশ হলেও লিলিয়াম আশা জাগিয়েছে। গেলো বছর পরীক্ষামূলক হলেও এবার বাণিজ্যকভাবে এই বিদেশি ফুলের আবাদ হয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি চাহিদা থাকায় একটি লিলিয়াম ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লিলিয়াম ফুল চাষিরা বলেন, 'ফুল কাটার পরে ২০ থেকে ২২ দিন ফুলদানিতে রাখা যায়। এটার অনেক কালার হয় কিন্তু আমাদের কাছে মাত্র দুইটা আছে। বিভিন্ন ধরনের কালার আমদানি করতে পারলে চাহিদা বাড়বে। সব ফুলের চাইতে লিলিয়াম লাভজনক।'
যশোরে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১১ ধরনের ফুলের চাষ হয়। যেখান থকে প্রতি বছর উৎপাদন হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ফুল।