মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ
কৃষি
0

পটুয়াখালীতে অবাধে চিংড়ির রেণু শিকার

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বিভিন্ন নদ-নদীতে অবাধে চলছে চিংড়ির রেণু শিকার। এতে একদিকে যেমন চিংড়ির বংশ বিস্তার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে নিধন হচ্ছে হাজার হাজার অন্য মাছের পোনা। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি চিংড়ির রেণুর সঙ্গে অন্য প্রজাতির অন্তত ১২০টি পোনা নিধন হচ্ছে।

নদী থেকে রেণু আহরণ করে তীরে বসেই চলছে বাছাইয়ের কাজ। একে একে বাগদা চিংড়ির রেণু আলাদা করে তীরেই ফেলা হচ্ছে জালে ওঠা পোয়া, ফাইশ্যা, লাখ্যা, ভলাচিংড়ি, ইলিশের পোনা।

সমুদ্র তীরবর্তী নদ-নদীতে শুরু হয়েছে বাগদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। এই সুযোগে নিষিদ্ধ মশারি জালে অবাধে চলছে রেণু নিধন। সরকারের বিধি নিষেধ থাকলেও ঝুঁকি নিয়েই পোনা শিকার করে জীবিকা চালাচ্ছেন হাজারো মানুষ।

পোনা শিকারীদের একজন বলেন, 'অন্যান্য মাছ নদীতে ফেলে দেয় আর বাগদা রেণু পোনা গুলো রেখে দেয়।'

স্থানীয় একজন বলেন, 'কৃষি কাজের পাশাপাশি এখানে রেণু পোনা শিকারের সাথে ৫শ’র মতো মানুষ কাজ করে থাকে।'

শিকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন আড়ৎ হয়ে রাতের আঁধারে এসব রেণু চলে যাচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে। ঘের মালিকরাও লুফে নিচ্ছেন রেণু। কেননা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদানকারী হ্যাচারি থেকে রেণু কিনতে প্রতি হাজারে খরচ হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। আর প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা এসব রেণু প্রতি হাজার সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় হাজার টাকায় পাওয়া যায়।

পোনা ব্যবসায়ী একজন বলেন, 'জেলেদের কাছ থেকে বর্তমানে রেণু কিনছি একশ’ রেণু পোনা ৪০ টাকা করে।'

সমুদ্রে ৪৭৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৭৩ প্রজাতির মাছের বিচরণ নদ-নদীতে। যে কারণে এখনো নদী ও সমুদ্র তীরের মানুষেরা রেণু শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অন্যান্য জেলেদের সঙ্গে রেণু শিকারীদের সহায়তা করা গেলে প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন পরিবেশ কর্মীরা।

কলাপাড়ার পরিবেশকর্মী মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, 'পেটের দায়ে মাছ শিকার করছে। যখন আহরণের সময় আছে তখন তাদের বিশেষ রিলিপের আওতায় এনে পোনা সংগ্রহ থেকে বিরত রাখা যেতে পারে।'

রেণু শিকার বন্ধে প্রতি বছর কোস্টগার্ড, মৎস্য অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। তারপরও নানা কৌশলে চলছে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা নিধন। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

কলাপাড়া মেরিন ফিশারিজ অফিসার মো. আশিকুর রহমান বলেন, 'বেশ কিছু অসাধু যারা জেলে আছে তারা রেণু শিকার করতে নামছে। আমাদের দৃষ্টি সজাগ আছে। আমরা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি।'

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি চিংড়ির রেণুর সঙ্গে অন্য প্রজাতির অন্তত ১২০টি পোনা নিধন হচ্ছে। রেণু শিকার বন্ধ না হলে সামুদ্রিক মাছের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের।

ইএ