কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা উৎসব। তবে সে উৎসব এবার রঙ ছড়াতে পারেনি দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনীতে। আগস্টের বন্যায় জেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পাশাপাশি দীর্ঘদিন খেতে পানি জমে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি জমিতে ধান আবাদ করতে পারেননি কৃষকরা। এমন অবস্থায় সারা বছরের খোরাক নিয়ে দুশ্চিন্তায় ক্ষতিগ্রস্তরা।
একজন কৃষক বলেন, 'পানি একেবারে ঢুকে পড়েছে। সব জমি ডুবে গেছে। আমার সব শেষ করে দিয়েছে। আমি যে ভাত খাবো সেই চাল হওয়ার মতো ধানের জমিও নেই এখন। সব ডুবে গিয়ে বন্যায় ভেসে গেছে।'
চলতি মৌসুমে সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে আমন আবাদ হয়েছে মাত্র ১৭৩ হেক্টর জমিতে। যেখানে গেলো মৌসুমে ছিল এক হাজার ২৬০ হেক্টর। প্রায় একই অবস্থা সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, দাগনভূঞাঁসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকায়। গেলো বার ফসল ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও এবার সরকারি সহায়তা চান কৃষকরা।
একজন কৃষক বলেন, 'পানি এখনও শুকাচ্ছে না। এবার সরিষাও করতে পারছি না। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, আমি সাহায্য চাচ্ছি কীভাবে করবো আপনারা একটা ব্যবস্থা করে দেন।'
এদিকে বন্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ফসলের মাঠে এখনও রয়ে গেছে তার প্রভাব। বেড়েছে পোকার আক্রমণ। নষ্ট হচ্ছে ধান, সবজিসহ সব ধরনের ফুল-ফসল।
ফেনীতে এবারের বন্যায় কৃষি খাতে অন্তত ৯০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের ক্ষতি পোষাতে নানা সহায়তার আশ্বাস কৃষি কর্মকর্তাদের।
ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, 'প্রণোদনা পুনর্বাসনের মাধ্যমে এরইমধ্যে আমরা সবজি বীজ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেছি। এছাড়াও সামনে আমাদের ধানের বীজ বিতরণ করা হবে। এভাবেই আমরা চেষ্টা করছি কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য।'
ফেনী পাঁচগাছিয়ার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার বলেন, 'গতবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৬০ হেক্টর, এ বছর ৪৭৩ হেক্টর। এটা অনেক তফাৎ আছে দুই বছরের মধ্যে। পানি ঢোকার কারণে জমি নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য আগাম সবজি চাষ করার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।'
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে গেলো অর্থবছরে ফেনীতে ৬৬ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়। যেখান থেকে উৎপাদন হয় অন্তত দুই লাখ নয় হাজার ২০৭ টন চাল। আর চলতি অর্থ বছরে আবাদ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭৬৪ হেক্টর জমিতে।