নড়াইলের মাটি পান চাষের উপযোগী। এখানে সাধারণত দুই ধরনের পান চাষ হয়; মিষ্টি পান ও সাচি পান। জেলার অন্তত তিন হাজার কৃষক ধান, পাটসহ অন্যান্য রবি শস্যের পাশাপাশি পানের আবাদ করেন।
তুলনামূলক বেশি লাভজনক তাই দিন দিন পানের আবাদ বাড়ছে। আর এ কাজে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন অন্তত বিশ হাজার মানুষ। নড়াইল সদর উপজেলার উজিরপুর গ্রামের কৃষক রতন বিশ্বাস। বংশ পরম্পরায় প্রান্তিক এই কৃষক পঞ্চাশ বছর ধরে করছেন পানের আবাদ।
রতন বিশ্বাস বলেন, 'এই পান চাষের উপরেই নির্ভরশীল আমাদের সংসার। এর পরেও কিছু অর্থ আমাদের কাছে থাকে।'
জেলার সবচেয়ে বড় পানের হাট নড়াইল পৌর এলাকার রূপগঞ্জ। সপ্তাহে রবিবার ও বৃহস্পতিবার এখানে পানের হাট বসে। বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পান কেনাবেচা করেন। এছাড়াও নড়াইল সদর, লোহাগড়া এবং কালিয়া উপজেলায় অন্তত বিশটি পানের হাট বসে। মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার পান যায় ঢাকা, সাতক্ষীরা, খুলনা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায়। যা মোট উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ।
পান চাষি বলেন, 'ছোটবেলা থেকে পান চাষের সাথে জড়িত। আজকে আমরা হাটে ১৩০ টাকা পান বিক্রি করেছি। বাজার আজকে একটু কম তারপরেও মোটামুটি চলছে।'
আরেকজন বলেন, 'একটা পানের বরজ করলে ২০ থেকে ৩০ বছর থাকে। ফলে অন্যান্য চাষের চেয়ে পান চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়।'
কৃষি বিভাগ বলছে, পান চাষিদের সহায়তায় নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন তারা।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, 'ইদানীং আমরা লক্ষ্য করছি যে পান চাষের পরিমাণ বাড়ছে। অর্থাৎ গত বছরের পান চাষ হয়েছিল ৫শ’১০ হেক্টর। আর এবছর আবাদ হয়েছে ৫শ’২৩ হেক্টর জমিতে। বিগত দুটি বছর পানের বাজার দর খুবই দুর্বল ছিল। কিন্তু এই মৌসুমে পানের বাজার দর আকাশচুম্বি। যেখানে গতবছর পান বিক্রি হয়েছে প্রতি পণ ১৮০ টাকা তা এবার বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।'
গত বছর নড়াইলে পান চাষ হয় ৫শ'১০ হেক্টর। চলতি বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫শ'২৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত এই পানের বাজারমূল্য প্রায় ৪শ' কোটি টাকা।