সারা বছরই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় রাঙামাটি। বছরে কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসেন এখানে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু সড়ক, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ অরণ্য আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপ্তাই লেকের নীল জলরাশিতে নৌভ্রমণ উপভোগ করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
সাধারণত ছুটির দিনগুলোতে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার পর্যটকের উপস্থিতি থাকে রাঙামাটির তিন পর্যটনকেন্দ্রে। আবার বিশেষ দিনগুলোতে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ হাজারে। তবে সবমিলিয়ে ১৫ হাজার পর্যটকের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে এই তিন পর্যটনকেন্দ্রে।
এরমধ্যে রাঙামাটি শহরে ৫৬টি আবাসিক হোটেল এবং ১৭টি ইকো রিসোর্ট আছে। যেখানে ১০ পর্যটকের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া সাজেক সবমিলিয়ে ১২টি রিসোর্ট কটেজে ৫ হাজার পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারেন। কাপ্তাইয়েও হোটেল রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
রাঙামাটি এখন পর্যটনে ভরা মৌসুম পার করছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে।
আজ (শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি) দুপুর রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু এলাকায় যশোর থেকে বেড়াতে আসা কানাডা প্রবাসী বলেন, ‘দেশের মধ্যে কেবল রাঙামাটিতে নদী, পাহাড় পর্বত সবকিছুই একসাথে পাওয়া যায়। এখানকার মানুষগুলোও খুব ভালো। এজন্যই রাঙামাটি অসাধারণ আমার কাছে।’
চট্টগ্রামের বাসিন্দা মৈত্রী নন্দী বলেন, ‘চট্টগ্রামের মধ্যে যে কয়টি পর্যটনকেন্দ্র আছে তার মধ্যে রাঙামাটি একেবারেই প্রথম দিকে আছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মধ্যে আমরা খুব সহজেই রাঙামাটি ভ্রমণ করে আনন্দ পেতে পারি।’
আরেক পর্যটক আশিক উল্লাহ বলেন, ‘রাঙামাটির সুন্দর এই পরিবেশ অন্য জায়গায় পাওয়া যায় না। পাহাড় ওঠতে পারি, নৌভ্রমণ করা যায়, ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত সেতু আছে। এগুলো আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। মন ভালো হয়ে যায়।’
শাহ আলম নামের এক পর্যটক বলেন, ‘কলেজে ভর্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। রাঙামাটি এমন একটি জায়গা, যার একপাশে লেক, আরেক পাশে পাহাড়। খুবই মনোরম পরিবেশ। লেকে যখন নৌকায় ঘুরে বেড়াই, তখন মনে হয় আমরা স্বর্গের মধ্যে আছি। না দেখলে বলে বোঝানো যাবে না। এজন্যই বারবার ছুটে আসি।’
সাজেকের ‘অবকাশ’ ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সাজেকের প্রায় সব হোটেল রিসোর্টেই শতভাগ বুকিং আছে। এটি আগামী ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ পর্যন্ত আগাম বুকিং হয়েছে।’
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন,‘রাঙামাটি শহরে সব হোটেল রিসোর্টে ৮০ থেকে শতভাগ বুকিং হয়েছে। একদিকে চমৎকার আবহাওয়া অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই ছুটির আমেজে আছে। তাই রোজা শুরুর আগেই এই সুযোগে পর্যটকরা পরিবার নিয়ে ভ্রমণে আসছেন।’
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘আজকে আমাদের মোটেলে ৮০ শতাংশ বুকিং আছে। এছাড়া আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮০ ভাগের ওপরে আগাম বুকিং হয়েছে। আশা করছি এই মৌসুমে ভালো ব্যবসা হবে।’
আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট, খাবারের দোকান (রেস্টুরেন্ট), সড়ক ও নৌযান, পাহাড়িদের তৈরি টেক্সটাইল কাপড় এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘিরেই মূলত রাঙামাটির পর্যটন বাণিজ্যের পাঁচ খাত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পাঁচ খাতে দৈনিক প্রায় দেড় কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে।