শীত নামলেই কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদীতে উড়ে আসে অতিথি পাখি। জেলা শহরের ভেতর পাখিদের অভয়ারণ্য এই এলাকা নরসুন্দা লেক সিটি হিসেবে পরিচিত। শীত মৌসুমে পাখি দেখতে এখানে আসেন দর্শনার্থীরা। তবে দখল ও দূষণে এই অভয়াশ্রম এখন হুমকির মুখে।
শীতের আমেজে নরসুন্দা নদীর বুকে ভিড় জমিয়েছে দূরদেশ থেকে আসা অতিথি পাখিরা। কিন্তু নেই উষ্ণ অভ্যর্থনা, বরণ ডালা কিংবা আতিথ্যের আয়োজন। দখল-দূষণের আজ হুমকির মুখে নরসুন্দা নদীর পাখিদের এই অভয়ারণ্য।
আবু হুরাইরা, দীর্ঘদিন যুক্ত ফটোগ্রাফির সাথে । ক্যামেরার ফ্রেমে প্রকৃতির রঙিন সৌন্দর্য বন্দী করতে টেকনাফ থেকে ছুটে বেড়ান তেতুলিয়া। তবে শীত এলেই তার ক্যামেরার লেন্স ঘুরে যায় নিজ জেলার নরসুন্দা নদীতে, খুঁজে অতিথি পাখিদের। কিন্তু এ বছর সেই পরিচিত দৃশ্য যেন ফিকে হয়ে গেছে। দখল আর দূষণে নরসুন্দার এই অভয়ারণ্য এখন প্রাণ হারাতে বসেছে। হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য। কচুরিপানার ভিড়ে অতিথি পাখিদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই যেন কঠিন হয়ে উঠেছে।
নরসুন্দা নদীটিকে দৃষ্টি নন্দন লেকসিটি হিসেবে গড়ে তোলার পর থেকে শীতকালে নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছিল এখানে। জানুয়ারি এলেই নরসুন্দার বুক চিরে ভিড় জমাতো হাজার হাজার বালি হাঁসসহ নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। পাখির কাকলিতে ভরে উঠতো আশপাশের এলাকা। তবে ধীরে ধীরে কমছে পাখির সংখ্যা। হতাশা বাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে।
পরিবেশবাদীদের দাবি, পরিযায়ী পাখিদের এই অভয়ারণ্য রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থানীয়রাও চান, দখল ও দূষণমুক্ত করে অতিথি পাখিদের জন্য নরসুন্দাকে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলা হোক।
অতিথি পাখিদের জন্য অনুকূল পরিবেশের এই নদী । তবে দখল-দূষণে নরসুন্দায় আসা পাখিরা পড়তে পারে খাদ্য সংকটে।
কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সহকারী অধ্যাপক মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ পাখিরা যে-সকল পোকামাকড় খেয়ে বড় হয়, এই ময়লা আবর্জনার কারণে এই পোকামাকড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে পাখিদের খাদ্যের চাহিদা মিটছে না।’
অতিথি পাখিরা শুধু নরসুন্দার সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু দখল-দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এই সুন্দর হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।