এই সমতলে জলের সাথে মানুষের মিতালী আজন্ম। জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নদ-নদী। আর বিশাল অঞ্চল জুড়ে সাগর উপকূল। যেখানে পানির সাথে মিশে আছে মানুষের জীবন ও জীবিকা।
জলাধার, হৃদ, সাগর কিংবা নদীমুখে তৈরি পৃথিবীর অন্যতম এই ব-দ্বীপে সব উৎসের পানির রঙ বা গুণাগুণ কিন্তু এক নয়। রয়েছে অনেক বৈচিত্র্য।
অথচ নদীমাতৃক দেশের পানির সহজলভ্যতা নদীকে করেছে অবহেলিত। তবে সময়ের বিবর্তনে এই সহজলভ্য স্বচ্ছ পানিই হয়ে উঠেছে দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মনুষ্য সৃষ্ট নানান প্রতিকূলতায় হারিয়ে যাচ্ছে নদনদী, ধ্বংস হচ্ছে পানির উৎস। এই উৎস সংরক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পানির গুরুত্ব সবার কাছে তুলে ধরতে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র পানি জাদুঘর।
সেখানেই দেখা মিলল দুই শিক্ষার্থীর। এসেছেন পানি সম্পর্কে জানতে। ঘুরে ঘুরে দেখছেন নদীগুলোর মানচিত্র। নানা রকম পানির নমুনা।
শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘জেলেরা কীভাবে মাছ ধরতো তাদের ছবি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র রয়েছে।’
জাদুঘরে স্বচ্ছ কাচের পাত্রে সংরক্ষিত প্রায় ৯০টি নদ-নদীর পানির নমুনা ও প্রায় ৭০০টি নদীর ইতিহাস সমৃদ্ধ বই-পুস্তক। আছে গ্রামবাংলার মাছ ধরার বিভিন্ন বিলুপ্তপ্রায় উপকরণ, মাটির ও কাসার তৈরি প্রাচীন তৈজসপত্রে। এছাড়া ব্যতিক্রমধর্মী জাদুঘরটিতে রয়েছে স্থানীয় নদীগুলোর তথ্য।
জাদুঘরের কিউরেটর বলেন, ‘নদীগুলো হারিয়ে যাচ্ছে সেই পানি আমরা তুলে রাখছি। অনেকে এসে বলে নদীগুলো হারিয়ে গিয়েছে আর আজকে এসে সেই নদীগুলোর পানি এখানে দেখলাম।’
কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে জাদুঘরটি সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা নেই তেমন। বিশ্বের সপ্তম ও এশিয়ার প্রথম এই জাদুঘর দেখতে বিদেশি অতিথিদের আগ্রহ বেশ।
নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকাকে সঙ্গে নিয়ে নদ-নদীর হারিয়ে যাওয়ার চিত্রও ফুটে উঠেছে জাদুঘরের সামনে।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারহা কবির বলেন, ‘পানি একটা সম্পদ, নদী একটা সম্পদ সে ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা নেই। বিভিন্নভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে আমরা শুরু করি আমাদের গবেষণা। সেখান থেকে এই জাদুঘর তৈরির চিন্তা আসে।’
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বড় পরিসরে পানি জাদুঘর প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই।
২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ। বেসরকারি সংস্থা আভাসের সহযোগিতায় পানি জাদুঘরটি পরিচালনা করছে কলাপাড়া জনকল্যাণ সমিতি।