কেউ হতে চায় নার্স, কেউবা পুলিশ আবার কারো ইচ্ছা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। তবে, স্বপ্ন অনেক হলেও সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জন্ম নিবন্ধন সনদ। নিষিদ্ধ পল্লিতে থাকা মায়েরা তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা চাইলেও জন্ম নিবন্ধন জটিলতায় সে ইচ্ছা অনিশ্চয়তার মুখে।
ফরিদপুর শহরের রথখোলা ও সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় রয়েছে দুইটি যৌনপল্লী। পল্লি দুটিতে মোট ৩শ' ৮৯ জন যৌনকর্মী রয়েছেন। তাদের শিশু সন্তান রয়েছে ২শ ৯৬ জন। এদের মধ্যে অনেকেই জন্ম নিবন্ধন করতে না পারায় স্কুলে ভর্তি হতে পারছেনা। নিজের অন্ধকারে বসবাস মেনে নিলেও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করতে চান মা, তবে নিবন্ধনের জটিলতায় সেই স্বপ্ন এখন পরিণত হচ্ছে দুঃস্বপ্নে।
যৌনকর্মীর সন্তানদের আবাসিকের পাশাপাশি পড়ালেখার সুবিধা দিয়ে আসছে শাপলা মহিলা সংস্থা নামে একটি স্থানীয় সংগঠন। শহরতলীর গেরদায় শিশুদের আবাসনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ভবন। বর্তমানে সেখানে ৫০ জন মেয়ে ও ৩৫ জন ছেলে আবাসন ও শিক্ষা সুবিধা পাচ্ছে।
শাপলা মহিলা সংস্থার উপ-পরিচালক শ্যামল প্রকাশ অধিকারী বলেন, ‘এদের অনেকেই জন্ম নিবন্ধন কার্ড নেই, ডিজিটাল হওয়ার কারণে জন্ম নিবন্ধন কার্ড করতে সমস্যা হচ্ছে কারণ তাদের মায়েরও জন্ম নিবন্ধন কার্ড নেই।’
চঞ্চলা মন্ডল, নির্বাহী পরিচালক, শাপলা মহিলা সংস্থা বলেন, ‘এই জটিলতা কাটানোর জন্য আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যেমন পৌরসভা, ডিসি অফিস। বিগত চার পাঁচ বছর যাবত আমরা কাজ করছি শুধু মায়ের পরিচয়ে যেন শিশুরা ভর্তি হতে পারে।’
মায়েরা সন্তানদের জন্ম নিবন্ধনের সময় বাবার নাম সঠিকভাবে দিতে না পারায় জন্ম নিবন্ধন করতে সমস্যা হয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয় তাহলে জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে বাধা থাকবে না বলে জানান।, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
দেশে জন্মগ্রহণ করা প্রতিটি শিশুই জন্ম নিবন্ধন সনদ পাওয়ার যোগ্য। যৌনপল্লির শিশুরাও তার ব্যতিক্রম নয়। শুধু মায়ের নাম দিয়েই জন্মনিবন্ধন করা যাবে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগ উপ-পরিচালক চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, ‘নিষিদ্ধ পল্লিতে জন্ম নেয়া শিশুর ক্ষেত্রেও জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই হবে এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সেটা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে সমস্যা হয় অনেক সময় বাবার পরিচয় পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের যে সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে সেখানে বাবার পরিচয় ছাড়াই মায়ের জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পরিচয়ের ভিত্তিতে এই নিবন্ধন করে দিতে পারি।’
পড়ালেখার সুবিধার্থে সন্তানদের জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যৌন পল্লির বাসিন্দারা।