নেত্রকোণায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হওয়া বিশেষ শিখন কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ছয় মাস বাকি রেখেই বন্ধ হয়ে যায় এই কেন্দ্রগুলো। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে নেত্রকোনায় চালু হয়েছিল বিশেষ শিখন কেন্দ্র। ২০২২ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের আবারও শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছিলেন ২৮০ জন শিক্ষক।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল, করোনার সময়ে পড়াশোনা বন্ধ হলেও এখন খালার বাড়িতে থেকে পড়ছেন বিশেষ শিখন কেন্দ্রে। তামিম ইকবালের মতো ঝড়ে পড়া অনেক শিক্ষার্থীই বিশেষ সুবিধায় আবারও ফিরেছেন শিক্ষা কার্যক্রমে। এর মধ্যে হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি।
প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষের ছয় মাস বাকি থাকতেই বন্ধ হয়ে যায় শিখন কেন্দ্রগুলো। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি'র আওতায় পরিচালিত হতো শিখন কেন্দ্রগুলো। এই কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই, পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ পান। পাশাপাশি কেন্দ্রগুলো ছিল হতদরিদ্র এবং অভিভাবকহীন শিশুদের জন্য ভরসার জায়গা। কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনা বন্ধের শঙ্কায় রয়েছে অনেকেই।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আওতায় আনতে সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যদিকে অভিভাবকরা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বিশেষ বিবেচনায় বাড়ানো অথবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অনেক শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবে ঝরে পড়ার শঙ্কায় থাকবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিখন কেন্দ্রের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু শিক্ষার্থীর ঝরে পড়তে পারে।
নেত্রকোণা সহকারী পরিচালক জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মোহাম্মদ ইমদাদুল হক বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থীর ঝরে পড়তে পারে, সেক্ষেত্রে আমাদের আরো উদ্যোগী হতে হবে যাতে আর কোনো শিক্ষার্থী যেন বাদ পড়ে। আমরা বাস্তবায়নকারী এনজিওকে বলেছি শতভাগ শিশুর ভর্তি বিষয়টি যেন তারা নিশ্চিত করে।’
নেত্রকোণার সদর, আটপাড়া, পূর্বধলা ও কলমাকান্দা উপজেলার মোট ২৮০টি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় চার হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।