বাংলাদেশ ফুটবলে বদলে যাচ্ছে আয়ের চিত্র। ডিজিটাল রাইটস আর পৃষ্ঠপোষকতায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশ ফুটবল এখন এগোচ্ছে নতুন বাজার বাস্তবতার দিকে।
দেশের অন্যতম বড় অগ্রগতি এসেছে টিভি ও ডিজিটাল সম্প্রচার সত্ত্ব থেকে। আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে স্ট্রিমিং ভিউয়ারশিপ বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব, ও স্থানীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ এখন আর শুধু টিভিতে সীমাবদ্ধ নয়, দর্শকরা বিশ্বে যেকোনো জায়গা থেকে মোবাইলেই দেখছে খেলা। এর ফলে সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বেড়েছে, আর ফেডারেশনের হাতে এসেছে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি।
বাফুফে সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম বলেন, ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচ যেগুলো হয়েছে, আমরা তিনটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের টিভি রাইটস এবং ওটিটি রাইটস বিক্রি করেছি। আর ফুটবল যেহেতু ৯০ মিনিটের খেলা, আর বিজ্ঞাপন ১৫ মিনিট দেখানো যায়। ডমেস্টিক লিগ হলে বাম্পার, এল শেপ দেখানো যায়। কিন্তু সময়ের কারণে এতটা অ্যাট্রাক্টিভ না।’
স্পন্সরশিপেও দেখা গেছে রেকর্ড অগ্রগতি। নতুন নতুন কর্পোরেট ব্র্যান্ড যুক্ত হয়েছে ক্লাব ও লিগ স্পন্সরশীপে। ফলে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা স্পন্সর থেকে শুরু করে ক্লাব জার্সি সব জায়গাতেই বেড়েছে আয়ের উৎস।
আরও পড়ুন:
ফাহাদ করিম বলেন, ‘প্রথমবার সিঙ্গাপুর ম্যাচে আমরা একটা ভালো ইনকাম করেছি। আমাদের কোনো খরচ হয়নি। হংকংয়ে কিন্তু আমরা আবার বাড়িয়েছি, রি-নেগোশিয়েট করেছি। ভারতের সঙ্গে ম্যাচে আরও বেশি নেগোশিয়েট করেছি। আমাদের এবার যে ডমেস্টিক লিগ হচ্ছে সেটা কিন্তু দুটি ওটিটি প্লাটফর্মে দেখানো হচ্ছে। দুটিই কিন্তু এবার টাকা দিয়ে কিনেছে, যেটা আগে কখনো হয়নি। আমাদের লিগে যে খরচ হয়েছে, আমি চেষ্টা করেছি ওটিটি দিয়ে সেটাকে পুরোপুরি কাভার করার জন্য। কিন্তু পুরো হয়নি, তবে গুড, আমার মনে হয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রোডাকশন খরচ ওটিটি থেকে রিকোভার করতে পারছি।’
জার্সি বিপ্লবের সবচেয়ে বড় 'পুশ' এসেছে জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবলে। ২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো একাধিক জার্সি লঞ্চ করেছে বাফুফে। হোম, অ্যাওয়ে,কিংবা ট্রেনিং কিট সবকিছুতেই ছিল ব্যতিক্রম নকশা ও বাণিজ্যিক পরিকল্পনা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় সব মিলিয়ে জার্সি বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ।
ফাহাদ করিম বলেন, ‘এটা পজিটিভ রেভ্যুলেশন। জার্সির কনসেপ্টটাকে আমরা স্টাবলিশড করেছি। আমাদের সঙ্গে কিট স্পন্সরের যে জার্সি দেয়ার কথা ছিল বছরে, তার থেকে ডাবলেরও বেশি আমরা নিয়েছি। কারণ প্রয়োজন ছিল, খেলোয়াড়রা চেয়েছে, এটা তো আমরা জানিও না। খেলোয়াড়রা রিকুইজিশন পাঠায় উনারা দিয়ে দেন। আমি বিশ্বাস করি ফ্যানরা যদি অরিজিনালটা পায় তাহলে তারা অরিজিনালটাই কিনবে। কারণ তাদের ভেতর ফুটবলের জন্য ওই ভালোবাসাটা আছে।’
মাঠে ফলাফল যাই হোক ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে বাণিজ্যিক খাতে। ডিজিটাল রাইটস, স্পন্সরশিপ, আর টেকনোলজি— এ তিন মিলেই বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবলের আর্থিক ভিত্তি। আর সেখানেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের বড় স্বপ্ন আরও বড় লিগ, আরও সচ্ছল ক্লাব, আর বিশ্বমঞ্চে প্রতিযোগিতামূলক বাংলাদেশ।





