গেল ২১ আগস্ট দেশের ক্রিকেটের স্মরণীয় মুহূর্ত। এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্রিকেট বোর্ডে চলা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে সভাপতির চেয়ারে বসেন সাবেক অধিনায়ক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ।
এরপর কেটে গেছে শতদিন। দেশের সাবেক অধিনায়ক নতুন দায়িত্বে হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি। দায়িত্বের শুরুতেই চ্যালেঞ্জ ছিল, অস্থিরতা কাটিয়ে দ্রুতই ক্রিকেটে ফেরাতে হবে প্রশান্তির হাওয়া। প্রত্যাশা ছিল, পালাবদলের পর অন্য পরিচালকরা পালিয়ে গেলেও, থেকে যাওয়া সাত পরিচালককে নিয়ে পাড়ি দেবেন বন্ধুর পথটা।
তবে দিন যত গড়িয়েছে, ক্রিকেটে এসেছে একের পর এক ঝড়। কখনও নারী বিশ্বকাপ নিয়ে অস্থিরতা, কখনও আবার বিপিএলের নতুন আসর মাঠে গড়ানো নিয়ে শঙ্কা। এছাড়া সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে নানামুখী চাপ তো ছিলই। এসবই ফারুক আহমেদ সামলেছেন একা হাতে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত আরেক পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে সাথে নিয়ে।
তবে সবকিছুতেই এ দু'জনের সংশ্লিষ্টতা মোটা দাগে তৈরি করেছে প্রশ্ন। তবে কি এখনও আগের মতোই চলছে দেশের ক্রিকেট বোর্ড?
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া বলেন, 'আইসিসির যে ফ্রেমওয়ার্ক আছে তার মধ্যে থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিসিবিতে পরিবর্তনটা এনেছি। তবে এটা বাস্তব যে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কাজ।'
নতুন বাংলার ক্রীড়া উপদেষ্টার বলা বিশৃঙ্খলা খুঁজতেই চোখে পড়ে অসংগতি। গঠনতন্ত্রে বলা ২১টি স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব বণ্টন না করেই চলছে বিসিবি। ক্রিকেট বোর্ডের এক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২১টি কমিটির মধ্যে সাত পরিচালককে দেয়া হয়েছে মোট আটটি কমিটির দায়িত্ব।
পরিচালক না হলেও বিসিবির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কমিটির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দেশের সাবেক তিন ক্রিকেটার।
এ তো গেল মোট ১০টি কমিটির হিসাব। বাকি থাকা ১১ কমিটির দায়িত্বে কে আছেন কিংবা কার হাত ধরে চলছে সেসব কমিটির কর্মকাণ্ড, জানেন না ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকরাও। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলেও মুখ খুলতে রাজি হননি কেউ।
এদিকে বিসিবির গঠনতন্ত্র বলছে, প্রতিটি কমিটির মাসে অন্তত একবার করে হতে হবে বৈঠক। তবে কমিটিগুলো সক্রিয় না থাকায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে হয়নি স্থায়ী কমিটির বৈঠক। পাশাপাশি বোর্ড মিটিংয়ের আগে নির্ধারিত এজেন্ডা পরিচালকদের জানানোর কথা থাকলেও ফারুক আহমেদের কমিটিতে মানা হয়নি এ নিয়মও। নিয়ম রক্ষার এক মেইল বার্তায় পরিচালকদের জানিয়ে দেয়া হয় বৈঠকের স্থান ও সময়।
দেশের ক্রিকেট বোর্ডে চলা এমন অনিয়ম আর অস্থিরতা কিংবা বোর্ডের সিংহভাগ দায়িত্ব নতুন সভাপতির নিজ কাঁধে নেয়ার প্রবণতাকে কীভাবে দেখছেন বিসিবির পরিচালকরা?
বিসিবি পরিচালক ইফতেখার আহমেদ মিঠু বলেন, 'আমাদের তো যার যার ডিপার্টমেন্ট আমরা চালাচ্ছি। অ্যাডিশনাল ডিপার্টমেন্টগুলো তো সবাই মিলে ফারুক ভাইয়ের নেতৃত্বে চালানো হচ্ছে। এখনও অনেক কিছু, বাকি ডিপার্টমেন্টগুলো ফারুক ভাইয়ের কাছেই আছে।'
বিসিবি পরিচালক ফাহিম সিনহা বলেন, 'ফারুক ভাই খুব প্রমড। মানে যেখানে আমার একটা ডিসিশন দরকার তার কাছে যাচ্ছি। উনি ইন্সট্যান্টলি সেটা সলভ করে দিচ্ছেন।'
যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পুরোনো বোর্ড পরিচালকদের ওপর আস্থাহীনতার কারণেই তৈরি হয়েছে এমন পরিস্থিতি।
ক্রিকেট বিশ্লেষক এম এম কায়সার বলেন, 'যেকোনো জায়গায় শুধু দু'জনকে দেখা যাচ্ছে। একটা টুর্নামেন্ট উদ্বোধন হবে সেখানে ফারুক আহমেদ আর নাজমুল আবেদিন ফাহিম। একটা প্রেস কনফারেন্স হবে সেখানেও তারা দু'জন, মিডিয়াকে কিছু জানাতেও তারা দু'জন। তাহলে কী ক্রিকেট বোর্ডের আর যে ১০ জন আছেন তারা কাজ করছেন না? মোস্ট প্রভাবলি এখানে একটা জিনিস হতে পারে তারা যেহেতু আগের রিজিমের সঙ্গে ছিলেন, সে কারণে তারা বর্তমানে টেলিভিশনের সামনে চেহারা দেখাতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না বলেই হয়তো পেছনের দিকে রয়েছেন।'
'দশের লাঠি একের বোঝা', প্রচলিত এই প্রবাদটা জানার পরও যেন নিজের কাঁধেই সব দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন বিসিবি প্রধান। পরিচালক পদে শূন্যতা, পুরনোদের ওপর আস্থাহীনতা সংকটে ফেলছে দেশের ক্রিকেটকে। এ থেকে উত্তরণের উপায় দ্রুত খুঁজে বের করতে না পারলে দেশের ক্রিকেট সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।