এখন মাঠে
0

সাফজয়ী ঋতুপর্ণা-রূপনার নেই বাড়িতে ঢোকার রাস্তা

টানা দ্বিতীয়বার নারীরা সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় খুশি ছড়িয়েছে শহর থেকে প্রান্তিক পর্যন্ত। সেরা খেলোয়াড় মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা ও সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমার রাঙামাটির বাড়িতেও ঢেউ লেগেছে সেই আনন্দের। তবে ছাদখোলা বাসে রাজকীয় সংবর্ধনা পাওয়া এই দুই খেলোয়াড়ের বাড়ির সামনে নেই সড়ক। দুই বছর আগে সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন।

৩০ অক্টোবর রাতে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সেই দলের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা ও সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমা।

অথচ ছাদখোলা বাসে রাজকীয় সংবর্ধনা পাওয়া এই দুই খেলোয়াড়ের বাড়ির সড়কই নেই। জেলার কাউখালীর দুর্গম মগাছড়ি গ্রামে ঋতুপর্ণার আর নানিয়াচর উপজেলার ভূইয়াদম গ্রামে রুপনার বাড়িতে যেতে হয় ছোট সাঁকো আর ধানক্ষেতের আল পেরিয়ে এবং নদীর তীরে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে।

এর আগে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবার সাফের শিরোপা ঘরে তুলে বাংলাদেশ। তখন এই ফুটবল কন্যাদের জন্য বাড়ি, সড়ক, সেতু আর বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেয় স্থানীয় প্রশাসন।

এরমধ্যে শুধু রূপনার জন্য সেমিপাকা ঘর করে দেয়া ছাড়া দুই বছরেও বাকি প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ায় আক্ষেপ জানিয়েছেন তাদের পরিবার ও গ্রামবাসী।

ঋতুপর্ণার এলাকাবাসী বলেন, ‘বাড়ি, সড়ক, সেতু আর বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি।’

ঋতুপর্ণা ও রূপনা চাকমার বেড়ে ওঠা সাধারণ পাহাড়ি পরিবারে। বড় তিনবোনের বিয়ে আর বাবা ও একমাত্র ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর পর মাকে নিয়েই সংসার ঋতুপর্নার।

আর মায়ের সাথেই থাকেন রূপনা চাকমা। ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সরকারি চাকরি ও প্রশাসনের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি জানিয়েছে দুই পরিবার।

ঋতুপর্ণা চাকমার মা বসুমতি চাকমা বলেন, ‘দুঃখ পেয়েছে। আমার মেয়েকে ভালোবেসে একটা চাকরি দেয়, চাকরি চাচ্ছি আমার মেয়ের জন্য। সড়কটা যেন হয়। বাড়িটাতেও সবকিছু নেই।’

নানা সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই দুই খেলোয়াড়ের সাফল্যে গর্বিত তাদের সাবেক কোচ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

রাঙামাটি কাউখালী ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, ‘ওরা যখন জিতে তখন একটু হইচই মাতামাতি, সংবর্ধনা দেয়া হয় আরকি। কয়েকমাস গেলেই এইটা সবাই ভুলে যায়। যারা প্রতিশ্রুতি দেয় তারাও ভুলে যায়। এইটা অবশ্যই মন খারাপের বিষয়।’

কোচ শান্তিময় চাকমা বলেন, ‘চলমান যারা জেলা পর্যায়ে খেলছে তাদের দিকে যদি নজর দেয়া হয় তাহলে আমরা ঋতুপর্ণাদের মতো আরও ভালো প্লেয়ার বের করতে পারবো।’

রাঙামাটিতে ফিরলেই কৃতী ৫ খেলোয়াড়কে সংবর্ধনা দেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।

জাতীয় দলে খেলা মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা, রুপনা আর আনাই, আনুচিংয়ের বেড়ে ওঠা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে। তাই এ ধারা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আরও বাড়ানোর তাগিদ রাঙামাটিবাসীর।

ইএ