ঈদে আসছে না নতুন টাকা, চড়া দাম খোলাবাজারে

মে মাসে নতুন নকশার নোট

অর্থনীতি , ব্যাংকপাড়া
বিশেষ প্রতিবেদন
0

ঈদে নতুন জামার সাথে বাড়তি আনন্দ যোগ করে নতুন টাকার সালামি। প্রতিবারই ঈদে নতুন টাকা বাজারে ছাড়া হলেও এবারই ব্যতিক্রম। পুরানো টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তে নতুন নোট ছাড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই খোলা বাজারে ছোট টাকার বান্ডেলে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে গ্রাহককে। ব্যাংক থেকে না পেলেও ছোটদের খুশি করতে অতিরিক্ত দামে অনেককেই কিনতে দেখা গেছে নতুন টাকা। অপরদিকে মে মাসের শেষ দিকে নতুন নকশার টাকা বাজারে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন জামা পরে ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে দিনটিকে উদযাপন শুরু করে ছোট-বড় সকলে। এদিন বাড়তি আনন্দে যোগ হয় নতুন টাকার সালামি। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর নতুন টাকা বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশেষ করে রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার কোটি নতুন টাকা প্রতি বছর বাজারে আসে। তবে এবার ঈদে নেয়া হয়েছে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুরানো টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাই এবার ঈদে নতুন টাকা ছাড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে ব্যাংকগুলোতে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে আসছেন না গ্রাহক। বিতরণ বন্ধ থাকায় ব্যাংকে নেই বাড়তি চাপ। অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে ব্যাংকের একাধিক কাউন্টার।

তবে অনেকটাই ভিন্নচিত্র দেখা গেছে নতুন টাকার হাটে। বাড়তি মূল্যে মিলছে সব ধরনের নতুন টাকা। তবে ব্যাংক থেকে নতুন টাকা না দেয়ায় সরবরাহ কিছুটা কম দেখা গেছে।

এসব দোকানে প্রতিটি ১০ টাকার ১০০টি নোটের বিপরীতে বাড়তি দিতে হচ্ছে ৪৮০ টাকা। ২০ ও ৫০ টাকার ১০০টি নোটের ক্ষেত্রে বেশি দিতে হচ্ছে ৫০০ ও ৪০০ টাকা। ১০০ ও ২০০ টাকার বান্ডেলের জন্য গ্রাহককে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা।

একজন ক্রেতা বলেন, 'কোনো দোকানেই টাকা নেই। দুই চারটা দোকানে আছে। তারা বিক্রি করছে। কাস্টমারকে বলে দেয় যে লাগলে নেন, না লাগলে নিয়েন না, দাম বেশি।'

ব্যাংক থেকে না পেলেও ছোটদের খুশি করতে অতিরিক্ত দামে অনেককেই কিনতে দেখা গেছে নতুন টাকা। তবে বাড়তি টাকার পরিমাণ খুব বেশি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

ক্রেতাদের মধ্যে একজন বলেন, 'পাঁচ টাকার দুইটা আর দুই টাকার একটা বান্ডিল নিলাম এক হাজার ৮০০ টাকায়। নতুন নোট তো বাংলাদেশ ব্যাংকও দিচ্ছে না। তো ঈদ হিসেবে বাচ্চারা তো এগুলো চায়, সেজন্যই নেয়া।'

সবশেষ ব্যাংকগুলোর কাছে ৬০০ কোটি টাকার বেশি নতুন নোট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে নির্দেশ থাকায় তা বিতরণ বন্ধ আছে বলে জানায় ব্যাংকগুলো।

সোনালি ব্যাংক পিএলসির শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'গ্রাহকদের মাঝেও একটা মানসিক প্রস্তুতি আছে। তারা অন্যান্যবারের মতো নতুন টাকা নিতে খুব যে চাহিদা দেখাচ্ছে তা কিন্তু না। কারণ তারা জানেন যে এ বছর ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সরবরাহ করা হবে না। আর গ্রাহকদের যে চাহিদা আছে সেটা আমরা আমাদের কাছা থাকা পুরোনো নোট দিয়ে পূরণ করছি। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।'

অপরদিকে মে মাসের শেষ দিকে নতুন নকশার টাকা বাজারে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'সম্প্রতি যে জুলাই বিপ্লব ঘটে গেলো তার ইমেজকে ধারণ করে এই ধরনের নোট বাজারে আসুক। সেটা আসার জন্য যেহেতু সময় লাগছেই সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই এই ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি হবে যে আমরা এবারের ঈদটা প্রচলিত নোট দিয়েই কাটিয়ে দিই।'

আগামীতে শুধু ঈদে নয়, পুরো বছর জুড়ে পাওয়া যাবে নতুন টাকা। তবে ক্যাশলেস সোসাইটি বাস্তবায়নে ধীরে ধীরে এর পরিমাণ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

এসএস