বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নতুন সংকট: বহিষ্কার স্থায়ী সমাধান নয় অভিমত বিশ্লেষকদের

বিভিন্ন জেলায় মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকদের বিক্ষোভ
বিভিন্ন জেলায় মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকদের বিক্ষোভ | ছবি: এখন টিভি
0

বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর বঞ্চিতদের বিক্ষোভের ঘটনায় এ পর্যন্ত আটজনকে বহিষ্কার করেছে দল। যদিও বিএনপি ও শরিক দলের নেতারা বলছেন, দল কিংবা জোটের হয়ে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবেন তারা। কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে বহিষ্কারসহ কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বিএনপি। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বহিষ্কার স্থায়ী সমাধান নয়। দলের সংহতি ধরে রাখতে বঞ্চিতদের পুরস্কৃত করার পরামর্শ তাদের।

মেহেরপুরে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আমজাদ হোসেনের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জেলা বিএনপির সভাপতি জাবেদ মাসুদের সমর্থকরা। দল ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পরেই মুখোমুখি মনোনয়ন প্রত্যাশী ২ নেতা।

সারাদেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে। যেমন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। চাঁদপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ হান্নানের সমর্থকরা ও সাতক্ষীরায় বিএনপি নেতা শহীদুল আলমের সমর্থকরা বাসস্ট্যান্ড-সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর তৃণমূল বিএনপির এ অস্থিরতা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাব্বির আহমেদ বলছেন, এমন প্রতিক্রিয়া সাধারণ ঘটনা হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। এতে নেতাকর্মীদের দলত্যাগের ঘটনা ঘটলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এটা তাদের আবারও ফাস্ট্রেট করবে এবং করাটাও স্বাভাবিক। একে করে দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দলের অবস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নাই।’

কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের অনেকেই আবার বলছেন দলের স্বার্থে মনোনীত প্রার্থীর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবেন তারা। বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা আবদুস সালাম যখন এ কথা বলছেন সেসময়ে তার আসনে জোট মনোনীত এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলছেন, মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ কাজ করলে দলই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

ববি হাজ্জাজ বলেন, কোনো দলের কোনো নেতা বা কোনো কর্মী যদি জোটের বিরুদ্ধে যেতে চায় সে দলের দায়িত্ব থাকবে সেটা ম্যানেজ করা। তাকে বহিষ্কার করবে কি করবে সেটা সেই দলের দায়িত্ব।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, ‘দলের মধ্যে ইউনিটিটা বজায় রাখতে হবে। যাকেই দিবে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। কারণ এখন আমাদের গণতন্ত্রের উত্তরণটা মূল কথা।’

মনোনয়ন ঘিরে এমন বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেখছেন গণতান্ত্রিক দলের সাধারণ ঘটনা হিসেবে। বলছেন, সীতাকুণ্ড ও মেহেরপুরের ঘটনায় আট জনকে বহিষ্কার প্রমাণ করে দলের বিরুদ্ধে গেলে যেতে হবে কঠোর শাস্তির মধ্যে দিয়ে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘প্রার্থী ১০ জন, পাবে ১ জন। এখন ৯ জন যদি দলের শৃঙ্খলা না মেনে যদি কিছু করে তাহলে দল ব্যবস্থা নেবে। সুতরাং ডিসিপ্লেনের মধ্যে না থাকলে তাকে কঠিন সাজা দেয়া হবে।’

তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সাব্বির আহমেদ বলছেন বহিষ্কার কোন স্থায়ী সমাধান বয়ে আনবে না। এতে দলের সংহতি নষ্ট হবে। দল ক্ষমতায় আসলে মনোনয়ন বঞ্চিতদের পুরস্কৃত করা হবে এমন প্রতিশ্রুতির দিয়ে নেতাকর্মীদের বোঝাপড়ায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, একেবারে সরাসরি শাস্তিতে না গিয়ে, যে প্রেক্ষাপটটা। এর দীর্ঘদিনের ত্যাগী কর্মী। প্রেক্ষাপটটা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। আরেকটা হচ্ছে অন্যভাবে তাদের রিওয়ার্ড দেয়ার প্রমিস করতে পারে।’

বিএনপি মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিক্ষোভ কিংবা এ নিয়ে সৃষ্ট দলীয় কোন্দল কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে নির্বাচনি প্রচারণা জোরালে হলে তা আরো স্পষ্ট হবে।

এএইচ