পিএস মাহসুদ: ঐতিহ্য নিয়ে নদীপথে আবারও ফিরছে শতবর্ষী নৌযান

স্টিমার পিএস মাহসুদ | ছবি: এখন টিভি
0

পুরানো ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে নদীপথে আবারও ফিরছে শতবর্ষী নৌযান স্টিমার পিএস মাহসুদ। প্রাথমিক পর্যায়ে সপ্তাহে দুই দিন শুক্র, শনিবার ঢাকা-বরিশাল রুটে চলবে এটি। বাকি ৫ দিন প্রমোদভ্রমণের জন্য ভাড়ায় মিলবে বাহনটি। আর পর্যায়ক্রমে স্টিমারের সংখ্যা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি নৌ উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের।

নদীর তীরে, নদীর জলে জীবনের সাড়া বেড়েছে। নদীতে দাঁড়, বৈঠার জলযানের চেয়ে যন্ত্র যানের ভিড় বেড়েছে। তাই হয়তো কমলা রঙের জলযানটি নদী থেকে কখন হারিয়ে গেল, তা হয়তো জানতেও পারে না, তীরবর্তী মানুষেরা। কিংবা বিরতি দিয়ে ফিরে আসাও চমকে দেয় না নৌপথের যাত্রী এবং কূলের মানুষদের।

সেই কবে জলপথে ঢাকা থেকে খুলনা রুটে দ্রুতগামী জলযান নামিয়েছিল প্লোটিলা কোম্পানি। ২০ থেকে ২২ ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া ছিল সেই সময়ে বিস্ময়ের। গতি ও রঙের কারণে পরিচিতি পেয়েছিল কমলা রকেট নামে।

সড়ক পথের দাপট ও শতবর্ষের ক্লান্তিতে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল রকেট যানগুলো। এই প্যাডেল স্টিমারগুলো তৈরি শুরু হয়েছিল ১৯১৮ সালে। যে রকেটের কথা বলা হচ্ছে সেই পিএস মাহসুদ তৈরি হয়েছিল ১৯২৮ সালে। ক্লান্ত বা জরাজীর্ণ রকেটের জলে নামা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঐতিহ্য ও পর্যটন বান্ধব জলযান হিসেবে ১৫ নভেম্বর আবার প্যাডেলে সাঁতার কাটতে শুরু করবে পিএস মাহসুদ।

আরও পড়ুন:

দোতলা বিশিষ্ট পিএস মাহসুদের নিচতলায় বেশ চওড়া পর্যটকবান্ধব ডেক। বিশাল প্যাডেলের সাথে পানির লড়াইটা এখানে বেশ উপভোগীয়। ডেকের ওপরে প্রথম আর দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিন। এই দুই শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য কেবল শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

এরবাইরে দেশি, ভিনদেশি কিংবা শ্রেণিভেদে যাত্রীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা তো থাকছেই। স্টিমার পিএস মাহসুদের কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রেখেই নতুন করে সাজানো হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

স্টিমার পিএস মাহসুদের কর্মকর্তাদের একজন বলেন, ‘অনেক কিছু মডিফাই করা হয়েছে। পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেই এইটা আরও নতুন করা হয়েছে।’

মূলত নদী পথকে পর্যটন হিসেবে আকর্ষণীয় করে তুলতে ফের স্টিমার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল আর শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে বাণিজ্যিক যাত্রা করবে পিএস মাহসুদ। বাকি ৫ দিন ঢাকার আশপাশে প্রমোদভ্রমণে স্টিমারটি ভাড়া নেয়া যাবে। এটি পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে বিদেশি কোম্পানি।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সলিম উল্লাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কোনো কোম্পানিকে আমরা এর দায়িত্ব দিতে চাচ্ছি। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। মূলত ৫ দিন ঢাকার আশপাশে ভ্রমণে থাকবে। আমরা এটাকে পিউর পর্যটন হিসেবে দেখবো। সপ্তাহে দুইদিন ঢাকা-বরিশাল যাবে।’

প্রাথমিক পর্যায়ে একটি হলেও চাহিদা বিবেচনায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন নৌ উপদেষ্টা। এরই মধ্যে আরও তিনটি পুরোনো স্টিমার অস্ট্রিচ, লেপচা ও পি এস টার্ন সংস্কারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এরকম আরও তিনটি স্টিমার রয়েছে। তার মধ্যে একটা নষ্ট হয়েছে। সেটা কিছু করা যাবে না মনে হচ্ছে। বাকিগুলো ঠিক থাকলে সংস্কার করা হবে।’

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী এই স্টিমার চলাচল। পুনরায় চালুর পর এই স্টিমার চলাচল কতদিন সক্রিয় থাকে সেটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সেজু