রাজধানীর নিকটবর্তী গাজীপুর জেলাজুড়েই রয়েছে অনেকগুলো ভারী ও মাঝারি শিল্প। কিন্তু এর মাঝেও বিস্তীর্ণ সবুজের দেখা মেলে কোথাও কোথাও।
দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৩টিতে রয়েছে বনভূমি। যার মোট আয়তন প্রায় ৬৩ লাখ ৬৪ হাজার একর। এরমধ্যে অন্যতম জেলা গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে সদর, শিমলাপাড়া, কাওরাইদ,রাথুরাসহ সাতটি বিটে বনভূমির পরিমাণ ২৪ হাজার ২৭১ একর।
যে বনে রয়েছে গজারি, কড়ই, শিমুল, অর্জুনসহ ১০ প্রজাতির মূল্যবান বৃক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, একটি শক্তিশালী চক্র বনবিভাগের গাছ কাটছে নিয়মিত। সাবাড় করছে একরের পর একর এলাকা।
সত্যতা অনুসন্ধানে গেলে দেখা যায়, বনের ভেতরটা ফোকলা হয়ে আছে। অথচ বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। বাস্তবতা হলো নিয়মিতই গাছ কাটা হচ্ছে এখানে।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘অনেকসময় চুরি করে কেটে নিয়ে যায়। যার যেটা দরকার লাগে কেটে নিয়ে যায়।’
পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে করাত-কল লাইসেন্স বিধিমালা-২০১২তে বলা হয়েছে, বনভূমির সীমানার পাঁচ কিলোমিটারের দূরত্বে ও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার দুই কিলোমিটার আওতাভূক্ত এলাকায় করাত-কল স্থাপন করা যাবে না।
কিন্তু প্রভাবশালীরা বনের পাশেই দেদারসে গড়ে তুলেছে অবৈধ করাতকল। অভিযোগ রয়েছে এখানেই গাছ চিরাই করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবেই দিনের পর দিন উজাড় হচ্ছে বনভূমি।
করাতকলে কাজ করা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যেহেতু বনের ভেতরে নিষিদ্ধ সে হিসেবে এখানে থাকা ঠিক না। কিন্তু অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আছে ওরা শালগাছ কাটে।’
এ নিয়ে শ্রীপুর রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন:
গাজীপুর শ্রীপুর রেঞ্জের ফরেস্ট কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘রাত ২টা, ৩টার সময় কাটে। যে প্রশ্নগুলো করছেন আমি উত্তর দেবো না। সিনিয়র যারা আছে তারা উত্তর দেবেন।’
সংরক্ষিত বনভূমির এ শাল গাছ বিক্রি হয় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। তারই খোঁজ নিতে এখন টিভির গন্তব্য এবার শনির আখড়ায়। সারি সারি সাজানো এ গাছগুলোর এসেছে গাজীপুরের বিভিন্ন বনভূমি থেকে।
শনির আখড়ার কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা তো আর আনি না। তারা এনে দিয়ে যায়। বড় বড় কোম্পানি শত শত বিঘা একসঙ্গে দখল করে। কীভাবে দখল করে এটা আমরা জানি না। সেটা ওদের ব্যাপার।’
নির্বিচারে গাছ কাটার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জানান, এতে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন স্তর নেমে যাবে। কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে, এ কারণে পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আছিব আহমেদ বলেন, ‘লোকাল ক্লাইমেটে কিন্তু তখন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। পাশাপাশি এখানে বৃষ্টি কম হবে। সেখানে খরা দেখা দেবে। পিউর কার্বন ডাই অক্সাইড সে যখন ট্র্যাপ করে নেয়, বিনিময়ে কিন্তু সে পিউর অক্সিজেন দিচ্ছে। তা কিন্তু মানুষ ভালোভাবে পাবে না।’
আর প্রধান বন সংরক্ষক জানান, বনভূমি কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার পুন:বনায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রামীণ বন তৈরি চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘সাম্প্রতিক এক বছরের মধ্যে অনেক বনভূমি বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন, পুলিশ যৌথ বাহিনীর সহায়তায় বড় বনভূমি গাজীপুর থেকে পুনঃউদ্ধার করে সেখানে আবার পুনঃবনায়ন করেছি।’
বনভূমি রক্ষায় বন সংলগ্ন এলাকায় যারা বসবাস করেন তাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় বনভূমির পরিমাণ মাত্র প্রায় ১৫.৫৮ শতাংশ। এরমধ্যে পৌনে ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে বন অধিদপ্তর।





