চীনের দুঃখ হোয়াংহো নদী হলে রাজধানী ঢাকার দুঃখ কী? নগরবাসীর দাবি, খানাখন্দে ভরা সড়ক।
পথচারীদের একজন বলেন, ‘রাস্তা ভাঙার কারণে অনেক সমস্যা হয়। চলাচলের সমস্যা হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে।’
চলতি পথে তার প্রমাণ মেলে অলিগলি থেকে রাজপথ সবখানে।
ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ ধোলাইপাড়-যাত্রাবাড়ি সড়ক যেন লন্ডভন্ড এক নগরী। বড় বড় গর্ত আর ভাঙাচোরায় এক লেন দিয়ে কোনোমতে চলছে যানবাহন। সৃষ্টি হচ্ছে বাহনের দীর্ঘ সারি। কিলোখানেক পথ পাড়ি দিতে প্রায়ই ঘণ্টার উপরে সময় লাগে।
চালকদের একজন বলেন, ‘অনেক জায়গায় গর্ত যার ফলে গাড়ি একবারের বেশি দুইবার চালানোয় কষ্ট।’
প্রধান সড়কের চেয়েও বাজে অবস্থা অলিগলির। মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, মুগদা, রামপুরা, খিলগাঁও ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকা খোঁড়াখুঁড়িতে এবং সংস্কার পরবর্তী অবস্থায় জর্জরিত।
যেমন, কাজীপাড়ার মসজিদ গলি। এখানে ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ বসানোর কাজ চলমান তিন মাস ধরে। যান চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হাঁটাও কষ্টকর। এলাকাবাসীর দাবি, কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন সেবা সংস্থা রাস্তা কাটে।
এলাকাবাসীর একজন বলেন, ‘রাস্তা কেটে ধীর ধীর গতিতে কাজ করছে। রাস্তার কাজ তুলনামূলক হয় না।’
এই গলি থেকে বেরুলেই রোকেয়া সরণি। সেখানে নতুন রাস্তা খুঁড়ে বৈদ্যুতিক লাইনের তার বসানো হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, খেয়াল খুশিমতো ভালো রাস্তা কেটে সড়ক খারাপ করছে সরকারি প্রতিষ্ঠানই।
পথচারীদের একজন বলেন, ‘ভালো রাস্তা যে যার মতো কাটছে।’
একই পরিণতি মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার সব সড়কের। ওয়ারী রোড, টিকাটুলি মোড়, আরামবাগ এমনকি বঙ্গভবনের পাশের সড়কেও দীর্ঘমেয়াদি খোঁড়াখুঁড়ি। ওয়াসা, ডেসকো, ডিপিসিসি'র মতো প্রতিষ্ঠান দফায় দফায় রাস্তা খুঁড়ে কাজ করেছে।
পথচারীদের আরেকজন বলেন, ‘পরিকল্পনার অভাব লক্ষ্য করা যায়। পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে এতবার খোঁড়াখুঁড়ি করতে হতো না।’
যদিও সড়ক খননে রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। জনগণের ভোগান্তি কমাতে বর্ষাকাল ব্যতীত, নির্ধারিত সময়ের বাধ্যবাধকতা এবং জরিমানার বিধান রেখে ২০১৯ সালে 'ঢাকা মহানগরী সড়ক খনন নীতিমালা' প্রণয়ন করা হয়। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে সভাপতি করে গঠন হয় 'ওয়ান স্টপ সমন্বয় সেল'। এবিষয়ে দেখভাল ও আইনের বাস্তবায়ন কেমন হচ্ছে- সে বিষয়ে উত্তর পেতে সিটি কর্পোরেশনে এখন টিভি।
পানি, বিদ্যুৎ, টেলিকমিউনিকেশন ও অন্যান্য সেবা সংস্থার সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। সব বিভাগকে আন্তরিক হবার আহ্বান তার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বছরেই শুরুতেই আমরা সব বিভাগকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করি। বিশেষ করে আমাদের কী কী কর্মপরিকল্পনা আছে। তারা যদি এই নভেম্বর-ডিসেম্বর আমাদের কাছে আবেদন করে তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে আন্ত: সমন্বয় করতে সুবিধা হয়।
এদিকে, 'ঢাকা মহানগরী সড়ক খনন নীতিমালা'কে স্রেফ কেতাবি বলে মন্তব্য করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান। জানান, নিয়ম ভাঙাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে কাজে আসবে না কোন আইন।
তিনি বলেন, ‘ঠিকাদাররা নিয়ম মানেন না। তারা সিটি করপোরেশনের যারা প্রকল্প পরিচালক তাদেরও মনে হয় কেয়ার করে না। তাদের রাজনৈতিক যে বল রয়েছে সেটাইকেই প্রাধান্য দেই এইজন্য জনগণ বা সিটি করপোরেশনের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন।’