অজু নাকি তায়াম্মুম? কখন কোনটি করবেন
পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ওলামায়ে কেরামগণ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে জানাজার নামাজ শুরু হতে যাচ্ছে এবং অজু করতে গেলে পুরো নামাজের চার তাকবিরই (Four Takbirs) ছুটে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে তায়াম্মুম (Tayammum) করে জানাজায় শরিক হওয়া জায়েজ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে: "অজু করতে গেলে যদি জানাজার নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ো।" (সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ১১৫৮৬)।
হাদিসের মূল পাঠ (আরবি) إذَا خِفْتَ أَنْ تَفُوتَكَ الْجِنَازَةُ وَأَنْتَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ فَتَيَمَّمْ وَصَلِّ
আরবি উচ্চারণ: ইযা খিফতা আন তাফুতাকাল জিনাযাতু ওয়া আন্তা ‘আলা গইরি উযু-ইন, ফাতায়াম্মাম ওয়া সল্লি।
বাংলা অর্থ : "যখন তুমি আশঙ্কা করবে যে ওজু করতে গেলে তোমার জানাজার নামাজ ছুটে যাবে, অথচ তোমার ওজু নেই; তবে তুমি তায়াম্মুম করো এবং নামাজ পড়ে নাও।" (সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ১১৫৮৬)
আরও পড়ুন:
পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তায়াম্মুমের বিধান অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
আরবি পাঠ: وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَفُوًّا غَفُوۡرًا
আরবি উচ্চারণ: ওয়া ইন কুনতুম মারদ-আ আও ‘আলা- সাফারিন আও জা-আ আহাদুম মিনকুম মিনাল গ-য়িতি আও লা-মাসতুমুন নিসা-আ ফালাম তাজিদু- মা-আন ফাতাইয়াম্মামু- সয়ি-দান তয়্যিবান ফামসাহু- বিউজু-হিকুম ওয়া আইদিকুম; ইন্নাল্লা-হা কা-না ‘আফুব্বান গফুর-আ।
বাংলা অর্থ: "আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও; তাহলে পবিত্র মাটি অন্বেষণ কর, তা দিয়ে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।" (সুরা নিসা: ৪৩)
আরও পড়ুন:
কখন অজু করা জরুরি?
ইসলামি ফেকাহ শাস্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, যদি এমন সম্ভাবনা থাকে যে অজু করে আসার পর জানাজার অন্তত শেষ তাকবিরটিও পাওয়া যাবে, তবে তায়াম্মুম করা যাবে না। সেক্ষেত্রে দ্রুত অজু (Ablution) করেই জানাজায় শরিক হতে হবে। অর্থাৎ, অন্তত এক তাকবির পাওয়ার সুযোগ থাকলে তায়াম্মুমের অনুমতি নেই।
নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র (References): এই বিধানটি কিতাবুল আছল (১/৯৬), মাবসুত লি-সারাখসি (১/১১৮), বাদায়েউস সানায়ে (১/১৭৭), খুলাসাতুল ফাতাওয়া (১/৩৯), রদ্দুল মুহতার (১/২৪১) এবং মুফতি মুহাম্মাদ সালমান মানসুরপুরীর 'দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের বিধান' (২/২২৩) গ্রন্থে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন:
কেন জানাজার ক্ষেত্রে এই ভিন্নতা?
সাধারণত জুমার নামাজ (Jummah Prayer) বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ক্ষেত্রে অজু করতে গিয়ে জামাত ছুটে গেলে সেই নামাজ কাজা করা বা একাকী পড়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু জানাজার নামাজ একবার শেষ হয়ে গেলে তা পুনরায় পড়ার সুযোগ থাকে না। এই নামাজ যেন একেবারে ছুটে না যায়, সেই কল্যাণ বিবেচনায় ইসলামি শরিয়তে তায়াম্মুমের এই অবকাশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ফকিহগণ (Islamic Jurists) একমত যে, যদি ওজু করে আসার পর অন্তত এক তাকবির পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে অবশ্যই ওজু করতে হবে। কেবল পূর্ণ নামাজ ছুটে যাওয়ার ভয় থাকলেই তায়াম্মুম করা যাবে।





