আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের আহ্বান

সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলন | ছবি: সংগৃহীত
0

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। আজ (মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলন-জিএসয়ের বক্তব্য তুলে ধরেন জিএসয়ের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়।

জিএসয়ের কেন্দ্রীয় সদস্য জুলহাসনাইন বাবুর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জিএসয়ের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য বাচ্চু ভূইঁয়া, জুলহাসনাইন বাবু, মনিরুল হুদা বাবন, আমজাদ হোসেন, গোলাম মোস্তফা, জাহিদ সুজনসহ নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্নীতি বাংলাদেশের এক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন কৌশলে এখানে দুর্নীতি হয়ে আসছে। রাষ্ট্র ক্ষমতাকে নিজেদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধির কাজে লাগাতে এখানে দুর্নীতিকেই নীতিতে পরিণত করা হয়েছে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের কালে পরিস্থিতির এমন অধোগতি ঘটে যে আইন বদলে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলে, ইনডেমনিটি দিয়ে দুর্নীতির দ্বার অবারিত করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, টাকা পাচার সকল রেকর্ড অতিক্রম করে, শ্বেতপত্রের তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনার আমলে পাচার হয় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। খেলাপি ঋণ বেড়ে এক লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যার সাথে অবলোপণকৃত ও পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ যুক্ত হলে দাঁড়ায় চার লক্ষ কোটি টাকা। বড় বড় প্রকল্প হয়ে দাঁড়ায় বড় বড় চুরির মহোৎসব। রাষ্ট্রের আইন ফাঁকি দিয়ে দুর্নীতি করার যে ধারা আমরা বিভিন্ন দেশে দেখে থাকি এটা ছিল তার চাইতে এক নতুন স্তরের ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রই হাজির হয়েছিল দুর্নীতির ব্যবস্থাপক হিসেবে।

আরও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানের পর স্বাভাবিক ভাবেই জনগণের ভেতরে আশার সঞ্চার হয়েছিল যে এসব লুণ্ঠনকারীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে, পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, দুর্নীতি রোধে সরকার প্রশাসনের সকল স্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু কার্যত এসব বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি ঘটেনি।

গণঅভ্যুত্থানে নতুন বন্দোবস্তের আওয়াজ উঠলেও কার্যত ক্ষমতা লাভকারী নতুন রাজনৈতিক শক্তি পুরোনো আমলাতন্ত্রের সহায়তায় পুরোনো বন্দোবস্তই বজায় রেখেছে। তাকে ব্যবহার করে নতুন সুবিধাভোগী তৈরি হয়েছে।

প্রশাসন, পুলিশ, ভূমি অফিস, কর, রাজস্ব, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প বিভাগসহ প্রত্যেকটি সংস্থাকে কুরে কুরে খাচ্ছে দুর্নীতি। গড়ে উঠেছে দুর্নীতির এমন এক বাস্তুতন্ত্র যার প্রত্যেকটি প্রত্যেকের উপর নির্ভরশীল। দুর্নীতির ব্যবস্থা ভাঙতে তাই প্রয়োজন এর আমূল সংস্কার।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসংহতি আন্দোলনের ১১ দফা প্রস্তাবনা

১. অর্থনীতির উৎপাদনশীল রূপান্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বিকাশ। বখরাতন্ত্রের বিদায়। কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে তরুণ জনগোষ্ঠীর শ্রম, মেধাকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাজে লাগানো। অনানুষ্ঠানিক খাত পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট আইনগত ব্যবস্থা।

২. দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী সংস্থায় পরিণত করা। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত তদন্ত, তদন্তে পর্যাপ্ত বাজেট, প্রযুক্তি ও জনবল নিশ্চিত করা।

৩. ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ আর্থিক খাতের আইনসমূহ সংস্কার। আর্থিক খাতে জমিদারি সুলভ কর্তৃত্বের অবসান। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক বরাদ্দ বন্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে স্বাধীনভাবে অডিট নিষ্পত্তি ও অনিয়মের সাগর পরিমাণ চুরির বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে শাস্তি বিধান।

৪. টেন্ডার ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় ই-টেন্ডার বাধ্যতামূলক করা। ক্রয়সংক্রান্ত সব তথ্য ওপেন ডেটা পোর্টালে প্রকাশ করা। বড় প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অডিট ব্যবস্থা।

৫. সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা পদোন্নতি ও বদলি মেধা ও কর্মদক্ষতা অনুযায়ী করা। দুর্নীতির অভিযোগে সুস্পষ্ট শাস্তি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিচারক ও জনপ্রতিনিধিদের (স্ত্রী-সন্তানসহ) সম্পদ বিবরণ বাধ্যতামূলক করা।

৬. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্ন ব্যতিরেকে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের নামে তথ্য গোপন এর আইন বাতিল করা। সরকারি কাজের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা। নাগরিক সমাজকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া।

৭. সেবা প্রদান– যেমন লাইসেন্স, অনুমোদন, জমি রেজিস্ট্রি—ডিজিটাল করা ঘুস নেওয়ার সুযোগ কমাতে মানবসম্পৃক্ততা হ্রাস নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলোতে এক টেবিল সেবা (One-stop Service) চালু।

৮. দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্যদাতাকে আইনগত সুরক্ষা। পরিচয় গোপন রেখে তদন্ত করা, তদন্তে সঠিক প্রমাণিত হলে পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি সম্পর্কে অভিযোগ গ্রহণ সেল গঠন।

৯. বিচার ব্যবস্থার সংস্কার; আদালতকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত রাখা। বড় দুর্নীতির মামলা পৃথক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালনা করা। সাইবার ফরেনসিক ও আর্থিক তদন্ত দক্ষতা বৃদ্ধি।

১০. সকল সরকারি অফিসে নাগরিকের হয়রানিমুক্ত সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা। হয়রানি রোধে সরকারি অফিসে অভিযোগ বক্স চালু করা। নিয়ম ভঙ্গের ঘটনা ঘটলে অভিযোগ বক্সে অভিযোগ দাখিলের ব্যবস্থা এবং দ্রুততার সাথে তার নিষ্পত্তির জন্য ব্যবস্থা।

১১. স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নৈতিকতা ও দুর্নীতি-বিরোধী শিক্ষা। দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য করে তোলা।

সেজু