রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় বিশাল এক বিলবোর্ড ঝুলছে ঢাকা-১৭ আসনের সম্ভাব্য বিএনপি জোটের সংসদ সদস্য প্রার্থী ববি হাজ্জাজের। বিলবোর্ডে বলা হচ্ছে- ধানের শীষে ভোট দিন। অথচ ববি হাজ্জাজ নির্বাচন কমিশনেরই নিবন্ধিত আরেকটি দলের চেয়ারম্যান। যার প্রতীক সিংহ। সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, ধানের শীষ নয়, তাকে ভোট চাইতে হবে নিজ দলের মার্কা সিংহ প্রতীকেই।
কিন্তু এরমধ্যেই যারা বিগত দিনের ধারা মেনে জোট বেঁধে অন্য দলের প্রতীক ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন, তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে তাদের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘গণতন্ত্রকে কীভাবে উদ্ধার করা হচ্ছে এ আরপিও এর মাধ্যমে? এর জায়গায় রাজনৈতিক অধিকার আরও যা যা ছিল, সেটা তো খর্ব করা হচ্ছে। এর আগে কী ছিল? জোটে থাকলে আপনি জোটের মার্কাও নিতে পারেন, নিজের মার্কাও নিতে পারেন। কেউ যদি নিজের মার্কা নিতে চায়, কেউ থামাচ্ছে না তাকে। কিন্তু জোটের মার্কা নিতে হলে সেই স্বাধীনতাটাও তার ছিল। এখন কী করলেন? এ স্বাধীনতাটা খর্ব করে দিলেন।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচনি জোট করা হয় কৌশলগত কারণে, নির্বাচনে জেতার জন্য। তো ১০টি দল মিলে যদি ১০টি জোট করে, আর যদি ১০টি প্রতীকে নির্বাচন করা হয় তাহলে এক ধরনের হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়। ক্যাম্পেইন করাটা আসলে ঝামেলা হয়ে যায়।’
সম্প্রতি নির্বাচনের প্রধান আইন-আরপিও’র সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। সংশোধিত এ আইনের ২০ ধারায় মৌলিক পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত কয়েকটি দল মিলে জোট করলেও, জোট মনোনীত প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে নিজ দলের প্রতীকেই। এতে বেশ বিপাকেই পড়েছেন নতুন নিবন্ধিত বা ছোটো দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি একভাবে। আরপিও একভাবে আছে। হঠাৎ করে আপনি আরপিও পরিবর্তন করে নিয়ে আসলেন। এখন আর দুই-তিন মাস বাকি নির্বাচনের। এখন পুরোপুরি নতুন আঙ্গিকে সবার তৈরি হতে হবে। এটা কয়েকজনকে লাভ দেয়ার জন্যই করা হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। অত্যন্ত নেতিবাচক একটা মুভ করেছে সরকারের পক্ষ থেকে এটা আমরা বিশ্বাস করি।’
আরও পড়ুন:
রাশেদ খান বলেন, ‘আমরা দলগুলোর সঙ্গে এটি নিয়ে বসিনি। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা কাজ করবো। তবে আমার কাছে যেটি মনে হয় যে, যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের পর এ নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা যদি এ আরপিও সংশোধন নিয়ে এ দলগুলোর সঙ্গে বসতো, আলাদাভাবে কথা বলতো, সেটি ভালো হতো।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন যেহেতু সংশোধন হয়ে গেছে, তাই তেমন কিছুই করার নেই প্রতীক ইস্যুতে। এজন্য অনেকটা বাধ্য হয়েই নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নামতে হচ্ছে সম্ভাব্য জোটভুক্ত দলগুলোকে। যদিও প্রতীক নিয়ে আইনি লড়াইও করতে চান তারা।
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘যদি সরকার মত বদলায় বা যদি কোনো মামলা হয়, তারপর সেটা কোর্টের প্রসিডিউর কী হবে সেটা কী হবে না হবে। সো এখনও যে এটা অ্যাবসিলিউট সার্টেইনে এটা হবেই না তা জানি না।’
রাশেদ খান বলেন বলেন,‘ জোটের প্রতীক হলে সবাই মিলে সে জোট জেতার ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে সবাই মিলে। কিন্তু আলাদা আলাদা প্রতীক হলে কাজ করাটা কঠিন হয়ে যায়।’
সংশোধিত আরপিও’র এমন বিধানের আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি এবং দলটির মিত্র দলগুলো। কিন্তু জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ কয়েকটি দল এ সংশোধনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়। শেষ পর্যন্ত এ সংশোধন বহাল থাকায় তারা মনে করেন, ভোটারদের কাছে এখন থেকে দলের পরিচয় আরও স্পষ্ট হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন,‘ ধানের শীষ, দাঁড়িপাল্লা আর শাপলা কলি— অন্যান্য সব দল যদি এ তিন মার্কায় বিলীন হয়ে যায় তাহলে তো এ তিনটা দলের বাইরে তো অন্য কেউ থাকবে না। কিন্তু আমরা চাই যেহেতু উচ্চকক্ষের চেয়ে নিম্নকক্ষের মধ্যে সরকারি দল আর প্রধান বিরোধী দলের একটা প্রতাপ বেশি থাকবে ফলে উচ্চকক্ষটা আরেকটু ডিসিট্রবিউটিভ হোক। সেটার জন্য নিজের মার্কায় নির্বাচন করাটা খুব জরুরি। এখন যে সমস্যাটা এটা কিন্তু বিএনপি আর বিএনপির সঙ্গে এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক কিছু দলের সমস্যা, টা অন্য কারও সমস্যা না।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটভিত্তিক নির্বাচন দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। কিন্তু প্রতীক ইস্যুতে আরপিও সংশোধনের ফলে ভোটের মাঠের সমীকরণ বদলে যাবে কি না, সেটি এখন দেখার বিষয়।





