সংসদ নির্বাচন: নতুন ৩ রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশের অপেক্ষা

0

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ৩টি বড় রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি বিএনপির নেতৃত্বে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে, আরেকটি জামায়াতের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি ইসলামি দল নিয়ে এবং অন্যটি ছাত্রদের গঠন করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে। দলগুলোর মধ্যে কে কোন জোটে যাবে, চলছে সেই হিসেব নিকেশ। তবে বিএনপিসহ সমমনা যে দলগুলো চীন সফরে যাচ্ছে, তাদের দিকে চোখ রাখছেন সবাই।

বিএনপি-জামায়াত, রাজনীতির মাঠে এক সময়ের চির মিত্র দুটি দল। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকার গঠন করেছিল তারা। এরপর ২০০৮ এর নির্বাচনে একসাথে বিরোধীদলে।

তারপর থেকে টানা ১৭ বছর রাজপথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে সঙ্গী ছিল দল দুটি। কিন্তু ৫ই আগস্টের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বদলে গেছে সবকিছু।

রাজনীতির মাঠে মিত্র দুটি দলের মধ্যে এখন যোজন যোজন দূরত্ব। অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের কেন্দ্রে থাকা ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে আসছে নতুন রাজনৈতিক শক্তির সম্ভাবনা। সবমিলিয়ে এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনকে ঘিরে, কে কোন জোটের দিকে ঝুঁকছে, তা নিয়ে এখন ব্যাপক সরব রাজনীতির মাঠ।

বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ৩টি বড় রাজনৈতিক জোটের উত্থান হবে। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে কিছু আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন করবে বিএনপি।

সেক্ষেত্রে বিএনপির সাথে চিন সফরে থাকা দলগুলোর সাথেই জোট হতে পারে বলে ধারনা অনেকের। অন্যদিকে জামায়াতের চেষ্টা সবগুলো ইসলামী দলকে একই ব্যালটে ঐক্যবদ্ধ করা।

সেক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে নতুন যে দল আসছে, তারা বিএনপি বা জামায়াত কারো সাথে আপাতত জোটবদ্ধ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তাদের নেতৃত্বে নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘বিএনপি সমমনা প্রায় ৮-১০টা দলের নেতৃবৃন্দরা এক সাথে চীন যাচ্ছেন। এখন এটা নিয়ে বেশ গসিপ আছে যে, সেখানে তারা জোটের কোনো রাজনীতি করবেন কি না। বিএনপি এখনো জায়গাটি পরিষ্কার করে নি। দ্বিতীয়ত আমরা দেখেছি জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর ভিতরে একটা বোঝাপড়া করার চেষ্টা করা হচ্ছে তারা একটা জোট বা বলয় তৈরি করতে পারছে কি না। তৃতীয়ত হচ্ছে ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন কোনো জোট আসছে কি না। বা যারা বাকি থাকবেন তারা কোনো জোট তৈরি করছে কি না।’

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘এখানে যে ৪২টি রাজনৈতিক দল আমরা যুগপৎ আন্দোলন করেছি বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতসহ তাদের সাথে প্রত্যেকেরই একটা বোঝাপড়া আছে। এখন বিষয় হচ্ছে একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ মাঠে নাই। কাজেই এখন তো সরকার থাকলে তার একটা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ দরকার।’

যদিও তারা বলছেন, বিএনপির সাথে গিয়ে দু-একটি আসন ভাগাভাগির রাজনীতি না করে শক্ত বিরোধী দলে থাকাটাও একটি কার্যকর সংসদের জন্য ইতিবাচক রাজনীতির ধারা তৈরি করবে।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘সংসদের যদি ফাংশনাল অপজিশন না থাকে বিএনপির মতো বড় দলকে যদি জবাবদিহিতার আওতায় আনা না যায়, তাহলে বিএনপি রাষ্ট্রকে সুশাসনের জন্য যে ওয়াদা করছে সেটা সে ডেলিভার করতে পারবে না। এখানে এমন আলোচনাও আছে বিএনপিসহ যারা আওয়ামী বিরোধী জোটে ছিলেন বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করবে, আর বাকিরা মিলে একটা বিরোধী দল হতে পারে কি না।’

নুরুল হক নুর বলেন, ‘মানুষ পুরোনো রাজনীতি তো দেখেছে। এখন আমরাও যদি ছোট দল হয়ে বড় দলের সাথে জোট করি, অনেকে কিন্তু হারিয়ে যায়। স্বকীয়তা থাকে না। সেক্ষেত্রে আলাপ আলোচনা চলছে। আসন বা সিট নিয়ে এখনো সমঝোতার আলোচনা হয় নি। আমরা গত সাত আট বছরের প্রতিকূল সময়ে রাজনীতি করে আজকের এ জায়গায় এসেছি। দুই তিনটা সিটের রাজনীতি করলে আওয়ামী লীগ আমলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতাম।’

জোট নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, তফসিল ঘোষণা ঘনিয়ে আসলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে তারা। তবে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার হবে, এটিই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে যাদের নিবন্ধন নাই, তারা আমাদের সাথে যদি অংশগ্রহণ করে, অতীতে আমাদের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছে। ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে নাই? ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে পারে। অথবা যাদের নিবন্ধন আছে তারা তাদের মার্কা নিয়ে সেখানে ভোট করতে পারে। জোট যে হওয়া যাবে না তাতে কোনো বাধা নাই। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সরাসরিভাবে যারা যুগপৎ আন্দোলনে শরীক ছিল তাদের নিয়ে আমরা জাতীয় ঐক্যভাবে সরকার গঠন করবো। এটা তো হলো সবচেয়ে বড় জোট।’

অন্যদিকে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলছেন, ৩০০ আসনে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি জোটের রূপরেখা রয়েছে দলটির অভ্যন্তরীণ আলোচনায়।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, আমাদের সাথে ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে শক্তি আছে, যে দলগুলো আছে সবার সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে।’

বিএনপি এবং জামায়াত দুই দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেলো, এবারের নির্বাচন কিংবা জাতীয় ঐকমত্যের সরকার- কোনোটিতেই কেউ কারো সঙ্গী হচ্ছে না।

এএইচ