টাঙ্গাইলের কালিহাতীর বেরীপটল গ্রামের কৃষক মোন্নাফ মিয়া। আগে জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ করলেও বেশ কয়েক বছর ধরেই আবাদ করছেন ভুট্টা। চলতি মৌসুমেও চাষ করেছেন ১১ বিঘা জমিতে। সব মিলিয়ে তার খরচ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, যেখান থেকে সাড়ে ৩ থেকে পৌনে ৪ লাখ টাকার ভুট্টা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
মো. মোন্নাফ মিয়া বলেন, 'তামাক ক্ষতিকর তাই আমরা বর্জন করছি। এজন্য ২-৩ বছর যাবত ভুট্টা চাষ করতেছি। এবার ফলন খুব ভালো হইছে।'
খরচ ও রোগবালাই কম হওয়ায় টাঙ্গাইলের চরাঞ্চল ও পাহাড়ি টিলায় ক্ষতিকর তামাক বা অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষের পরিধি বাড়ছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৫৬ হেক্টর জমি থেকে ৩৫ হাজার ৪৮০ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়। এরপর প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে উৎপাদন।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৭২০ হেক্টরে ৪০ হাজার ৩৬৩ টন, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫ হাজার ২৬০ হেক্টরে ৪৯ হাজার ২২১ টন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫ হাজার ৪৮৪ হেক্টরে ৫১ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৭ হাজার ৩২০ হেক্টরে ৬৮ হাজার ৬৬১ মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন হয়েছিলো।
বর্তমানে কৃষকরা প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি করছেন ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। তারা বলছেন, এতে লাভের মুখ দেখলেও সারসহ কৃষি উপকরণের দাম কমানো গেলে লাভের পরিমাণ আরও বাড়তো। এজন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতাও চান তারা। তবে কৃষি কর্মকর্তা জানান চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা দিচ্ছেন।
কৃষক বলেন, একবিঘায় ধান পাওয়া যায় ২০ মণ আর ভুট্টা পাওয়া যায় ৩০-৩৫ মণ। আগে যে জমিতে তামাক চাষ হইতো, এখন সেখানে তামাকের চাইতেও ভুট্টা ভালো হয়। সরকার যদি সহযোগিতা করে তাইলে এখানে তামাক থাকবে না। সারের দাম কমালে কৃষক বেশি লাভবান হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা চাষিদের ভুট্টা চাষের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করছি। তাদেরকে প্রণোদনাও দিয়ে থাকি। বিশেষ করে চর এলাকায় ভুট্টা চাষ বেশি সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করছি। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।'
জেলায় প্রতি বছর ভুট্টা উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লেও নেই খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো কারখানা। তাই গো-খাদ্য বা ফিড তৈরির কারখানা স্থাপন করলে ভুট্টাচাষ ব্যাপক বাড়ার সঙ্গে তৈরি হবে কর্মসংস্থান।
চরাঞ্চল ও পাহাড়ি টিলায় চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৭৫৬ হেক্টরে ৭০ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের।