হাতবদলে কৃষকের লাভ কমছে

কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
দেশে এখন
0

কৃষকের কাছ থেকে ফড়িয়া, তারপর ব্যাপারির গুদাম ঘুরে ধান যায় মিলারের চাতালে। একেক হাতে যোগ হয় লাভের হিসাব। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও কোনমতে উৎপাদন খরচ তুলতে ঘাম ঝরে যায় কৃষকের।

ধান বিক্রি করে সপ্তাহের বাজার করতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বগুড়ার মাহমুদপুর এলাকার কৃষক শ্যামল। একাধিক বেপারির কাছে ঘুরেও ২৮ টাকার বেশি ওঠেনি তার ধানের কেজি। ৪২০ টাকায় ১৫ কেজি ধান বিক্রির পর লাভ-লোকসানের প্রশ্নে হাসিমুখে চলে যান শ্যামল।

কৃষকরা বলেন, 'ব্যবসায়ীরা লাভ করতেসে আর আমাদের লস। আমরা ধান কম দামে বেচি আর তারা বেশি দামে বিক্রি করে। তারা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে যে, এর উপরে বেশি টাকা দিয়ে ধান কিনবে না।'

আমন ধান কাটার পরপরই ধার-দেনা পরিশোধের চাপ আসে। তাই সোনালী ধান গোলায় তোলার আগেই বেপারির হাতে তুলে দিতে হয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান উৎপাদন করেও কৃষকের লাভের অঙ্ক মেলে না। তখন হাতবদল করে প্রতি মণ ধানে  ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত লাভ করে দালাল, ফড়িয়া আর বেপারিরা। আরো লাভের আশায় সেই ধান মজুত করেন অনেকে। আবার কেউ কেউ চাল তৈরির পর বাড়তি লাভের অপেক্ষায় থাকে।

কৃষকরা বলেন, ‘লাভ করতেসে আড়তদাররা। ধান কিনে রাখসে এক হাজার ১২৫ টাকা মণ দরে, আর বিক্রি করবে সাড়ে ১৩শ' টাকায়। ওরাই তো লাভ করবে।’

মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভের পাহাড়ে আঘাত হানতে ধান সংরক্ষণ ও মজুদ আইন প্রয়োগের পরামর্শ ব্যবসায়ী ও কৃষক নেতাদের। তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলছেন, বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীর প্রয়োজন আছে।

কৃষক নেতা আমিনুল ফরিদ বলেন, ‘কৃষক বাজারে তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য না পেলে সেটি সরকারের বাফায় স্টোক করবে। কিন্তু সরকার কি প্রত্যেকটি উপজেলায় বাফার স্টোকের জন্য কোন ব্যবস্থা করেছে।’

জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতা হক বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কৃষক কিন্তু অনেক সময় ধান বিক্রিই করতে পারে না। তাই মধ্যস্বত্বভোগীদের দরকার আছে। তবে তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে হবে, তারা বেশি লাভ করছে কিনা?’

গত আমন মৌসুমে বগুড়ায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪২০ হেক্টর জমি থেকে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭৫ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। যেখান থেকে ৭ হাজার ৪৩ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২৯৬ দশমিক ৪৪ টন।