সংস্কৃতি ও বিনোদন , সাহিত্য
দেশে এখন
0

আজ পঁচিশে বৈশাখ, কবিগুরুর জন্মদিন

জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মদিন আজ। লেখালেখির বাইরেও তার অন্য এক জগতে ভাবনা ছিল শুধুই মানুষকে নিয়ে। নিজে জমিদার থাকা স্বত্ত্বেও শাসন-শোষণের ঊর্ধ্বে গিয়ে সমাজের কোনো বৈষম্যে নয় বিশ্বাস করতেন মানুষের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সমতাভিত্তিক মনোভাব।

'একলা মানুষ টুকরো মাত্র। মানুষ যদি মিলতেই না পারে ভরসার পরিবেশ তৈরি হবে কি গো?' মানুষকে একতাবদ্ধ হওয়ার এই মন্ত্র কাগজে কলমে লিখে রেখে গিয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জমিদারির প্রথাগত দম্ভ, লালসা, অহমিকা, শাসন-শোষণ এসব কিছুকে ছাড়িয়ে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ জন্ম নেয়া এই কবি ছিলেন মানুষের কবি। তিনি সদা দেশপ্রেমে মগ্ন থাকা প্রজা-দরদী এক জমিদার কবি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সামাজিক জীবনে কেবল একজন প্রজাবান্ধব জমিদার ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন তা নয় বরং আধুনিক কৃষির একজন রূপকার হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বাস করতেন, গ্রামের উন্নতির মধ্যেই সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। তার কবিতায়ও সেই প্রতিধ্বনি শোনা যায়, 'যারে তুমি নিচে ফেল তোমারে বাঁধিবে সে নিচে; পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে; পশ্চাতে টানিছে।'

শিক্ষক, গবেষক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, 'গল্প, কবিতা, নাটক সবই লিখেছেন তিনি। কিন্তু দেখা যাবে তার যে ভাবনাগুলো তা প্রবন্ধের মধ্যে আছে। তিনি বার বার বলেছেন আমাদের মানুষের মাঝে লোভের প্রবণতা ব্যাপক।'

'সমবায় ২' প্রবন্ধে রবিঠাকুর বলেছেন, দল বেঁধে থাকা, দল বেঁধে কাজ করাই মানুষের ধর্ম। এই ধর্ম থেকে বিচ্যুত হলেই মানুষ লোভ, ক্রোধ, মোহের মতো রিপুর শিকারে পরিণত হয়। ধনীর ধনে দারিদ্র্য হরণের ক্ষমতা যে নেই সেকথাই তাঁর সমবায় ভাবনার মূলে ছিল। লোক সাধারণের ধন-উৎপাদনের ক্ষমতার্জনের মাধ্যমেই যে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব, সেকথাও তিনি বারবার বলেছেন।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ বলেন, 'তিনি যে চিন্তা করেছিলেন তা কিন্তু সঠিক। মানুষ যখন এক হয় তখন অনেক কিছু করতে পারে। একা একা অনেক কিছু করা যায় না।  এখনকার সময়ের কথা যদি বলি তাহলে এখন আমরা হয়ে গেছি ব্যক্তিকেন্দ্রীক। আমরা সবাই এখন হয়ে গেছি আমি।'

প্রচলিত অর্থে অর্থনীতিবিদ তিনি না হলেও তিনি তৈরি করেছিলেন একটি সৃষ্টিশীল পারিবারিক পরিবেশ। ছিল তার ব্যাপক পাঠাভ্যাসও। দেশের গ্রামীণ জীবনকে প্রত্যক্ষ করেছেন কাছ থেকে; লক্ষ্য করেছেন ঔপনিবেশিক শাসন কীভাবে জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশকে শৃঙ্খলিত করে। একই সাথে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সমাজ ও সভ্যতাকে পর্যালোচনা করেছেন গঠনমূলক দৃষ্টিতে। লিখে রেখে গেছেন 'আমাদের দেশে পল্লীতে পল্লীতে ধন-উৎপাদন ও পরিচালনার কাজে সমবায় নীতির জয় হোক।'

ইএ