২৫ মার্চ কাল রাতে ঢাকার নিরীহ মানুষের ওপর হঠাৎই হামলে পড়ে ইয়াহিয়ার হানাদার বাহিনী। অপারেশন সার্চলাইটের নামে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পিলখানায় চলে নির্বিচার হত্যা।
মূল পরিকল্পনা ছিল পুলিশ ও ইপিআরকে ধ্বংস করা। যেন পাকবাহিনী ছাড়া আর কারো কাছে অস্ত্র না থাকে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণের মাধ্যমে জাতিকে মেধা ও নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল দখলদার বাহিনী।
আরো পড়ুন: ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত আজ
১৯৭১, ২৫ মার্চ রাত ১০ টা ৪০ তেজগাঁও দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের একটা ওয়ার্লেস বার্তা পৌঁছায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। জানানো হয়, ঢাকায় ঢুকে পড়েছে পাকবাহিনীর ৩৭টি গাড়ি, যেগুলো রাত সাড়ে ১১ টায় পৌঁছায় রাজারবাগ। আর তখন বেজে ওঠে পাগলা ঘণ্টা।
বাংলাদেশ পুলিশের সার্জেন্ট শামীনা আক্তার শুচি বলেন, ‘গাড়ি বহর থেকে যখন পাকসেনারা নেমে পড়েন তখন আমাদের একজন পুলিশ সদস্য প্রথম গুলি ছোড়েন যেটা ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্রশ্রস্ত প্রতিরোধের গুলি।’
আরো পড়ুন: স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রথম প্রতিরোধ হামলা করে রাজারবাগে অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা।
এই অপারেশনে পুলিশের ৭৫১ জন শহীদ হন। যাদের অনেককেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রাত ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হল, জহুরুল হক হল, বেগম রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় হামলা শুরু হয়।
আরো পড়ুন: নতুন আঙ্গিকে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘অপারেশন সার্চলাইটের একটা অংশ হিসেবে তারা ঢাবিকে টার্গেট করে। তার বিভিন্ন হলে আক্রমণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসায় বাসায় আক্রমণ করে। এখানকার বহু শিক্ষক কর্মচারীকে হত্যা করে।’
তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানায় যখন পাকবাহিনী পৌঁছায় তখন সময় ১২টা। আগে থেকেই ওয়ারলেস যন্ত্র বন্ধ করে রাখায় ইপিআর সেনাসদস্যরা কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহুরমুহু গুলিতে শহীদ হন।
রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মাজহার বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য পাকিস্তানের দিক থেকে তা হলো পুলিশরা অর্গানাইজ হয়ে লড়বে যারা ফলে মিলিটারি কৌশলে যেখানে যেখানে অস্ত্র আছে সেখানে আক্রমণ করবে। আমাদের তো প্রস্তুতি ছিল না। যার ফলে আমাদের অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
৭১'র মতোই ২৪ এর আন্দোলনও ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, যা একই সূত্রে গাঁথা। দুই প্রেক্ষাপটে হলেও শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মাজহার বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান অবশ্যই দ্বিতীয় যুদ্ধ। এইটা হয়েছে রাষ্ট্র গঠন করবার ব্যর্থতা। এইটা হয়েছে বলেই আমরা দ্বিতীয় যুদ্ধ বলছি।’
২৫ মার্চ এর গণহত্যার প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই যে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, তার শেষ হয় ১৬ই ডিসেম্বর নতুন বাংলাদেশের জন্মে।