ছয় উপদেষ্টার বহর নিয়ে প্রথমবার সন্দ্বীপের উপকূলে এসেছে কপোতাক্ষ ফেরি। তা দেখতে তীরে ভিড় করছে উৎসুক মানুষের দল। চারিদিকে সাজ সাজ রব, যেন উৎসবের আমেজ। দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এমন আনুষ্ঠানিক যাত্রা দেখে নদী তীর জুড়ে লেগেছে আনন্দের ঢেউ।
সীতাকুণ্ড প্রান্ত থেকে ফেরিতে চড়ে সকাল ১০ টায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ায় পৌঁছান ছয় উপদেষ্টা। ঘাটে নেমে শেষ করেন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা। পরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে দ্বীপবাসীর সাথে যোগ দেন উদ্বোধনী সমাবেশে।
তারা বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছরেও যেই সেবা চালু করা যায়নি, সেটি মাত্র ৭ মাসে সম্ভব হয়েছে। সন্দ্বীপের সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগই নয়, এর সাথে মৎস্য কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে লাগবে পরিবর্তনের ছোঁয়া।
ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ৫০ বছরেও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে কোনো সরকার ফেরি চালু করতে পারেনি। চারদিকে কত উন্নয়ন হয়েছে কত কিছু ঘটেছে অথচ এই দ্বীপে যাতায়াত যেন মধ্যযুগের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এ সরকার দুর্গম এ দ্বীপের সাথে ফেরি সার্ভিস চালুর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছে। যা চালুর মধ্য দিয়ে এই দ্বীপ দেশের অর্থনীতিতে অন্যতম অবদান রাখার সুযোগ তৈরি হবে। পর্যায়ক্রমে এই দ্বীপের অন্যান্য অবকাঠামো ও সুযোগ সুবিধা বাড়াতে কাজ করবে সরকার।’
সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির বলেন, ‘এটা কিন্তু মোটেও কোনো সহজ কাজ ছিল না এবং এজন্যই এতদিন এটা করা সম্ভব হয়নি। ওনারা এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন এবং সফলও হয়েছেন। কিন্তু এটা নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে কারণ সামনে বর্ষাকাল আসছে।’
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা একটা ঘোষণা দিচ্ছি যে, আগে যেটা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল মে মাস থেকে সেটাকে আমরা এগিয়ে এনে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন করেছি।’
পরে দেশের দুর্গম এই দ্বীপের যোগাযোগে মাইলফলকের এমন যাত্রায় ভার্চুয়ালি সঙ্গী হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
ফেরি সার্ভিস চালুতে কেবল শত বছরের দুর্ভোগ দুর্দশা নয়, দ্বীপবাসীর মনে উকি দিচ্ছে নানা সম্ভাবনার গল্প। এর মধ্যে দিয়ে পণ্য ও মালামাল পরিবহণ যেমন সাশ্রয়ী ও গতিশীল হবে তেমনি কমবে সমুদ্রপথে জরুরি রোগী মারা যাওয়ার মতো ঘটনাও। এরই মধ্যে ফেরিকে ঘিরে চালু হয়েছে বাস সার্ভিসও।
সাধারণ মানুষদের মধ্যে একজন বলেন, ‘মানুষ এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, বিশেষ করে এটা যাতায়াত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটা নতুন দ্বার উন্মোচিত করবে।’
এই সেবা চালু হলে আবহাওয়ার কারণে বছর জুড়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দেয়ার চ্যালেঞ্জ যেমন থাকবে তেমনি উপকূলে ফেরিঘাটের অবকাঠামো নিয়েও আছে শঙ্কা। তবে এ নিয়ে বিকল্প পরিকল্পনা আছে সরকারের।
নৌ পরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখন আমরা ক্ষণস্থায়ীভাবে দিয়েছি, দুই মাসের জন্য।’
আপাতত চালু হলে ফেরি দিনে দুইদিন চলাচল করবে। পারাপারে যাত্রীদের গুণতে হবে ৮০ থেকে ১০০ টাকা৷ আর ছোটবড় যানভেদে তা হবে ৪০০ থেকে ৫৭০০ টাকা।