রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন ইমরুল কায়েস। যোগ্যদের পাশ কাটিয়ে মাত্র তিন বছরের অভিজ্ঞতায় বনে যান হিসাবরক্ষক। সবশেষ দায়িত্বে ছিলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে। এই পদ কাজে লাগিয়ে ঘুষ-দুর্নীতিতে গড়েছেন রেকর্ড। ইমরুল কায়েস অবৈধ টাকা বৈধ করতে গড়ে তোলেন সামাজিক সংগঠন উৎসর্গ ফাউন্ডেশন।
এ কাজে তার সহযোগী ছিলেন স্ত্রী তানজিনা খান। তার নামে রয়েছে কয়েকটি নার্সিং কলেজ ও ম্যাটস। গঠনতন্ত্র ও প্রবিধানমালা অনুযায়ী যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
এ দম্পতির বিরুদ্ধে নিজ প্রতিষ্ঠানেই জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের তদন্ত দল। যেখানে দেখা যায়, মন্ত্রণালয়ের নিয়ম না মেনে নিজের তিন প্রতিষ্ঠানে ১৯৩ শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন ইমরুল কায়েস ও তালজিলা খান। এ নিয়ে জানতে এখন টেলিভিশনের প্রতিবেদক দলের গন্তব্য শ্যামলী মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানালেন, এ ঘটনায় তিনি বিব্রত।
শ্যামলী মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ডা. নাতাশা রিয়া হারুন বলেন, 'আমি অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি জানুয়ারি থেকে। এ বিসয়টা আমিও শুনছি, দেখছি। ভর্তির বিষয়টা অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে যারা আছেন, তারা দেখে। আমার মনে হয় এই বিষয়ে উনারা ভালো বলতে পারবে।'
এবার গন্তব্য বাকি দু'টি প্রতিষ্ঠানে। অধ্যক্ষ জানালেন, করোনার পরিস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়নি। তবে অবৈধ উপায়ে কেউ ভর্তি হলে নিজে দায় নিতে নারাজ তিনি।
আইএমটি এন্ড ম্যাটসের অধ্যক্ষ ডা. মো. তাজুল ইসলাম তালুকদার বলেন, 'রেজাল্ট শিট দিতে হয় রেজিস্ট্রেশন করার জন্য। আমার কাছে তো রেজিস্ট্রেশন ওই রেজাল্ট শিটসহ আসছে বলেই আমি ভর্তি করিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে ২৩ তারিখে আমাকে একটা চিঠি দিয়েছে। সম্ভবত এটা তদন্তাধীন আছে। সেখানে আমাকেও ডাকছে।'
অভিযোগের তীর যখন প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি তানজিলা খানের দিকে, প্রতিবেদক দল কথা বলতে চায় তার সাথে। অফিসে প্রবেশ করতেই কর্মকর্তারা জানালেন নেই তিনি।
মুঠোফোনে কথা হয় ইমরুল কায়েসের সাথে। জানালেন, আজ দেখা করা সম্ভব নয়।
ইমরুল-তানজিনা দম্পতির নানা অপকর্ম নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রীর এসব শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ করে দেন। এই কাজে সহযোগিতা করেন অনুষদের সাবেক সচিব ডা. জাহিদুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেহেনা পারভীন। এতে বাতিল হতে পারে ১৯৩ শিক্ষার্থীর ভর্তি।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের সচিব ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, '২০২০-২১ এবং ২১-২২ এ অনেকগুলো ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়েছে। আসল শিক্ষার্থী ভর্তি না হয়ে ফেক শিক্ষার্থী ওখানে ভর্তি করানো হয়েছে। এবং আমরা দেখলাম প্রায় ২০০ এর কাছাকাছি।'
সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে কেন্দ্রীয়ভাবে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হয়। অভিযোগ আছে, গেল ১০ বছরে বহু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন অবৈধ উপায়ে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তদন্তে ধীরগতি স্পষ্ট। তাই প্রশ্ন উঠেছে কাদের বাঁচাতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এমন হেয়ালীপনা।