সংবিধান সংস্কার কমিশন মূলত সাতটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সুপারিশগুলো প্রস্তাব করেছে। এর শুরতেই আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে গুরুত্ব দেয়া। তারা বলছেন, এই সুপারিশ প্রস্তাবে মূল লক্ষ্য ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, প্রধানমন্ত্রীর পদে একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
সংবিধানের প্রস্তাবনাতেও পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে কমিশন। যার শুরুতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ এই ভূখণ্ডের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
নাগরিকতন্ত্র নিয়ে মূল উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবের মধ্যে আছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জায়গায় জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ। বাঙালি জাতির জায়গায় বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিতি লাভ।
সংবিধানের মূলনীতিতে বলা হয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচারের সঙ্গে, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে বিবেচিত হবে।
নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা আরও বিস্তৃত ও স্পষ্ট করা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায়। আইনসভা নিয়ে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। বলা হচ্ছে, আইনসভা হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। নিম্নকক্ষে আসনসংখ্যা হবে ৪০০, গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচন পদ্ধতিতে। এর মধ্যে যেকোনো ১০০ আসনে শুধু নারী প্রার্থী থাকবে। প্রার্থী হওয়ার ন্যুনতম বয়স কমিয়ে করা হয়েছে ২১ বছর। দুজন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন নির্বাচিত হবেন বিরোধী দল থেকে। প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও রাজনৈতিক দলের প্রধান যেকোনো একটি পদে অধিষ্ঠিত হবে পারবেন একজন সংসদ সদস্য। প্রস্তাবনায় আছে দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ায় পূর্ণ ক্ষমতা। স্থায়ী কমিটির সভাপতি হবেন বিরোধী দল থেকে।
উচ্চকক্ষের আকার বলা হয়েছে ১০৫ সদস্যদের। গঠন হবে জাতীয় নির্বাচনের সংখ্যানুপাতিক ভোটে। পাঁচ শতাংশ আসন থাকবে অনগ্রসরদের জন্য। রাষ্ট্রপতির মনোনয়নের জন্য রাখা হয়েছে বাকি পাঁচ শতাংশ। তবে নিম্নকক্ষে প্রতিনিধিত্বের জন্য পেতে হবে অন্তত এক শতাংশ ভোট। উচ্চকক্ষেও অন্তত একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হবেন বিরোধীদের থেকে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অংশে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর। পরপর দু'বারের বেশি নির্বাচিত হবে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবে নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। দু'বারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রীও।
সুপারিশ প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক চুক্তি, অভিশংসন, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, নির্বাহী বিভাগ, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয় সংবিধান সংস্কার সুপারিশ কমিশন।