লাল সবুজের মানচিত্রজুড়ে এই যে ৫৬ হাজার বর্গমাইল। এই জনপদের মানুষ বরাবরই অধিকারের প্রশ্নে জীবন বিলিয়ে দিতে সদা প্রস্তুত, সদা জাগ্রত। কী ’৫২, কী ’৬৯, ’৭১ কিংবা ’৯০। কিন্তু তবুও তো আক্ষেপ- এতো রক্ত, এতো জীবনের বিনিময়েও কেন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ালো না আজও। আর তাই তো চব্বিশে এসেও নতুন এক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবিতে রাজপথে বিলীন হলো প্রায় দুই হাজার মানুষের জীবন। মূলত জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমেই সেই বন্দোবস্তের প্রতিচ্ছবি দেখতে চায় ছাত্র-জনতা। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশে তারা যে আল্টিমেটাম দিয়েছে, তার অগ্রগতি কতদূর?
সরকারের আশ্বাসে গত ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র প্রকাশ থেকে সরে এসেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। আল্টিমেটাম অনুযায়ী, সময় আছে আর মাত্র একদিন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ড. ইউনূস বার বার বলছেন সবাই মিলে যেটার সাথে আছে সেখানে তিনি আছেন। তিনি হচ্ছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। সে জায়গায় আমাদের রাজনৈতিক দল, আমাদের শিক্ষার্থীরা ও ছোট দল সবাই যদি এক ঐক্যমতে আসে তাহলে তো সে জায়গায় আমাদের না থাকার কিছু নেই।’
এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর খসড়া প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জামায়াত বলছে, সরকারের তরফ থেকে পাঠানো খসড়া নিয়ে আলোচনা করছে তারা। আলোচনাও প্রস্তুত বিএনপিও। তবে পুরো সংবিধান কোনোভাবেই বাতিল চায় না দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ঘোষণাপত্র ওদের ব্যাপার, কীসের ঘোষণাপত্র জানি না। ওদের বয়স তো আমাদেরও ছিল। আমরা যখন তরুণ ছিলাম আমরাও আন্দোলন করেছি। তখন আমাদের ঘোষণাপত্র লাগেনি। তখন তো এই সংবিধান রেখেই করেছি তা তো বাতিল করতে হয় নি।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলে, ‘জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জাতীয়ভাবে কিছু থাকা উচিত। এই কাজটি করার দরকার ছিল ৫ আগস্টের পরপরই। ওরা একটা ড্রাফট করেছে এবং আমাদের মতামত অফিসিয়ালি চাচ্ছে। সে কারণে আমরা আলোচনা করে ঠিক করবো বলেছি।’
সরকারের চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি বলছে, আরো সময়ের প্রয়োজন হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসবেন তারা। তবে কোনোভাবেই ঘোষণাপত্র প্রকাশ থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, ‘আমরা এটাতেই দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছি। এটার একটা দালিলিক প্রমাণ প্রয়োজন। সেটার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।’
রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের মতে, কেন ’৭১ ব্যর্থ হয়েছিল, তার জন্যই প্রয়োজন চব্বিশের ঘোষণাপত্রে। তিনি বলছেন, এই চব্বিশের অভ্যুত্থানে ঠিক কী কী কারণে মানুষ রাস্তায় নেমে শেখ হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছে, তার পুরো তালিকাটাই জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘চব্বিশের অভ্যুত্থান হয়েছে বাস্তবে। শেষ মুহূর্তে এসেছে একদফা এক দাবি। শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি। এই স্লোগান হচ্ছে তাদের শেষ দাবি। দাবির পেছনে কি ছিল? দুই হাজারের কাছাকাছি মানুষ নিহত হয়েছে।’
তিনি বলছেন, ‘চব্বিশ ব্যর্থ হলে অচিরেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে- তার জন্য আবার কতকাল ধরে অপেক্ষা হবে- হয়ত অনিশ্চয়তাকেই সঙ্গী করতে হবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে।’