কৃষি
বিশেষ প্রতিবেদন
0

সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ চাষিরা

জামালপুরে সরিষা ফুলের হলুদ রঙে ভরে উঠেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ আর মাঠ। সরিষার মাঠ থেকে মৌমাছির দল গুনগুন শব্দে মধু সংগ্রহ করছে। এ এক অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। বর্তমানে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে মৌ চাষিরা। তবে মধু সংগ্রহে প্রশিক্ষণ এবং স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা দিলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ বাড়বে বলে মনে করেন মৌ চাষিরা।

গত দুই সপ্তাহ আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া কালিবাড়ী ইউনিয়নের চর মোহাডাঙ্গা গ্রামে এসেছেন ৫৫ বছর বয়সী মো. শফিকুল ইসলাম বাবুল। দীর্ঘ বারো বছর যাবৎ মৌ চাষ করে মধু আহরণ করেন তিনি । বছরের ছয় মাস মৌ বাক্স নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়ান বাবুল। ১২বছর আগে শখের বসে স্থানীয় এক বন্ধুর কাছে থেকে মৌ চাষের খুঁটি নাটি শিখে চারটি মৌমাছি বাক্স দিয়ে শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে মৌমাছি পালন করেন। বর্তমানে তার খামারে ১৫০টি বাক্স রয়েছে। চলতি মৌসুমে তার সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকা লাভ হবে ।

নারায়নগঞ্জের মৌ চাষি মো. শফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, 'বক্স আছে সবমিলে ১৫০টি। পুরো বাক্সের কালেকশন করতে পারিনি এখনও। অর্ধেক বাক্সের মতো কালেকশন করছি। আমাদের আল্লাহর রহমতে চার মণের মতো মধু হয়েছে।'

সরিষা ক্ষেতের পাশে শত শত মৌ বাক্স স্থাপন করে বিশেষ পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহে এখন ব্যস্ত মৌ চাষিরা। এক একটি মৌ বাক্সে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মৌমাছি থাকে। এই মৌমাছিগুলোই সরিষা ফুল থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে জমা করে। আর সপ্তাহের একদিন মৌ বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন মৌ চাষীরা। মৌ চাষিরা জানান, খুচরা ও স্থানীয়দের কাছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি ধরে মধু বিক্রি করছে। এছাড়াও দেশের বড়,বড় কোম্পানির কাছে তারা পাইকারি ৩০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছেন । শতাধিক বাক্স থেকে সপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ মণ সংগ্রহ করছে তারা ।

একজন মৌ চাষি বলেন, 'বক্সগুলো খুলে ফ্রেমগুলো বের করে মৌমাছি সরিয়ে ওইটা নিয়ে মেশিনে দিই। সেখানে বাতাসের মাধ্যমে মধুটা বের হয়ে যায়, হাতের স্পর্শ ছাড়াই আমরা মধু হার্ভেস্টিং করতে পারি।'

অন্য একজন মৌ চাষি বলেন, 'যেখানে ফুলের সন্ধান পাই সেখানেই আমরা বাক্স নিয়ে চরে যাই।'

জামালপুরে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। পৌষের কনকনে ঠান্ডা হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষার ফুল । আমন ধান ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে একই জমিতে সরিষা চাষ করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা । এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশাও তাদের । অন্যদিকে সার,বীজ, কীটনাশক শ্রমিক মজুরিসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ । তবে বাজারে সরিষার ভালো দাম পেলে লাভবান হবে কৃষকরা ।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে । আর কৃষকরা উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করায় ভালো ফলনের আশাও করা হচ্ছে । পাশাপাশি মৌ চাষিরা সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে যেন স্থানীয়ভাবে কোনো সমস্যায় না পড়ে সেজন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।

জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা বলেন, 'এ বছর জামালপুর জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ হাজার ২৮৫ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৪১ হাজার ৫৫০ হেক্টর। গতবছরের তুলনায় আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে৩৮৫ হেক্টর। কৃষি বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তারা মাঠে কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।'

চলতি বছর ৪১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছে কৃষকরা । আর সরিষা মাঠে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১০০ মৌ বাক্স স্থাপন করেছে মৌ চাষীরা ।

এসএস