ষাট পেরিয়ে শ্বাসকষ্টের জালে আটকে গেছেন নাসিমা আক্তার। সুস্থতার আশায় চাঁদপুরের মতলব থেকে এসেছেন ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। ইটের ভাটা বেষ্টিত অঞ্চলে তিনি নিজেও লাকড়ির চুলায় রান্না করেছেন যুগের পর যুগ। যা তার ফুসফুসের কার্যক্ষমতাকে দুর্বল করেছে ধীরে ধীরে। কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়া এক ঘণ্টাও চলা কষ্টকর হয় তার।
২০২৩ সালে বায়ুদূষণে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ চব্বিশেও ১০ গুণ বেশি দূষণ নিয়ে দফায় দফায় শীর্ষে এসেছে। শুষ্ক মৌসুমে একাধিকবার বাতাসের মান সূচকে ৩শ'র বেশি স্কোর নিয়ে চরম অস্বাস্থ্যকর নগরীর তালিকায় জায়গা করে নেয় ঢাকা।
বায়ুমান ৩০০'র বেশিতে খুবই অস্বাস্থ্যকর হলেও অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে চব্বিশের ডিসেম্বরে ৮০০ অতিক্রম করেছে। এই পরিস্থিতি অতি বিপজ্জনক বা জরুরী অবস্থা ঘোষণার মতো। যদিও এসব নিয়ে মানুষের খানিক মাথাব্যথা থাকলেও তা বন্ধে নেই কার্যকরী উদ্যোগ।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গত ১২ বছর ধরে আমরা ১ থেকে ৩ এর ভেতর অবস্থান করছি অ্যাজ এ হোল বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘ফিটনেসবিহীস যেসব যানবাহন আছে সেগুলোকে দ্রুত ফেজ আউট করা, ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া, অবৈধভাবে যেসব জায়গায় বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা, জনবল নিয়োগ দিয়ে সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আসতো।’
চারপাশের দূষণের জালে আটকে মানুষ দেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে ৭ বছর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে ফুসফুসের রোগগুলো জটিল আকার ধারণ করছে।
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস শাকুর খান বলেন, ‘যাদের অ্যাজমা আছে তাদের অ্যাজমার তীব্রতা বেড়ে যায়। যাদের সিওপিডি আছে তাদের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং বারবার জটিলতায় পড়ে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের নিউমোনিয়া ও ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আরো প্রচুর যক্ষা রোগীর সৃষ্টি হয় এবং এর সংক্রমণ বেড়ে যায়। ফুসফুসের ক্যানসারও কিন্তু এ বায়ুদূষণের কারণে অনেকাংশে হয়ে থাকে।’
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা তো ট্রিটমেন্ট দেই, ট্রিটমেন্ট চালাই। চালালে অ্যাটলিস্ট কিছু কিছু ডিজিস আছে প্রগ্রেসও হয় না, যেখানে আছে সেখানেই স্থিতি অবস্থায় থাকে। তাই যে কারণে রোগ হয় সেটাকে আগে বাদ দিতে হবে।’
৪৪ বছরে বায়ুদূষণে প্রাণ গেছে ১৩ কোটি মানুষের। বাংলাদেশে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের। প্রকৃত সংখ্যা আরও কত বেশি জানেন না কেউ। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দূষণের উৎস বন্ধ করতে না পারলে ঘরের দূষিত বাতাসেও মৃত্যু হার বাড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।