প্রতিবারই জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় সাতক্ষীরার নতুন নতুন এলাকা নদীর লোনা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মিঠা পানির উৎস, পাশাপাশি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে ফসলি জমি। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। এখানকার কৃষকদের লবণের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফসল ফলাতে হচ্ছে। এতে স্বল্প ফসল উৎপাদনেও খরচ হচ্ছে বেশি। তবে দীর্ঘদিন কৃষকদের এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
গত বছর থেকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় কৃষকদের মধ্যে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ, সম্প্রসারণ ও এর মাধ্যমে মাটির উৎপাদনশীলতা এবং ফসলের ফলন বাড়াতে কাজ করছে ঢাকার শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগে এরই মধ্যে চলতি মৌসুমে সরিষা চাষে সুফল মিলেছে।
কৃষকদের একজন বলেন, ‘তাদের দেয়া সরিষা আমরা লাগিয়েছি। এখন দেখছি এত সুন্দর গাছ হয়েছে সবাই বলছে ফলন অনেক ভালো হবে।’
আরেকজন বলেন, ‘তারা যে পদ্ধতিতে গাছ লাগাতে বলেছিল সেভাবে লাগানো হয়েছিল এখন দেখা যাচ্ছে তাদের দেয়া বীজে ফলন ভালো হয়েছে।’
গবেষকরা বলছেন, লবণাক্ত ও খরাপ্রবণ এলাকায় নতুন স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে ফসল চাষে ভিন্নতা এসেছে। এর মাধ্যমে অল্প সময় ও কম খরচে বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। পাশাপাশি মাটির লবণাক্ততা কমিয়ে মাটির স্বাস্থ্য, উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
নতুন এই প্রযুক্তি উপকূলীয় এলাকায় কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে বীজ ও জৈবসার দেয়াসহ নানা কার্যক্রম করছেন তারা।
ঢাকা শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘লবণাক্ত প্রবণ এলাকায় আমরা নতুন টেকনোলজি ব্যবহার করেছি। এতে নতুন করে ফসল বিন্যাস করেছি। আমরা চেষ্টা করছি কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো ভালো ফলন আনা যায় তা গবেষণা করা হচ্ছে। এরপর কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে কীভাবে লবণাক্ত এলাকায় আরো বেশি ফলন করে কৃষকরা রিটার্ন পায় সে নিয়ে কাজ চলছে।’
উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে ধানসহ নানা ধরনের লবণাক্ততা সহনশীল জাতের ফসল চাষ শুরু করেছেন এক দশক আগে। তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে সেচ ও সার খরচের তুলনায় ফসলের উৎপাদন আশানুরূপ নয়। এজন্য অনেক এলাকার কৃষকরা লবণাক্ততা সহনশীল জাতের ফসল চাষ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থায়, উন্নত এ প্রযুক্তির ব্যবহার উপকূলীয় কৃষকদের চাষাবাদ অব্যাহত রাখতে উৎসাহ যোগাবে।