দেশে এখন
0

কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য

কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে গিয়ে প্রতিদিনই পড়তে হচ্ছে দালালদের খপ্পরে। ফিঙ্গার প্রিন্ট কক্ষ থেকে শুরু করে অফিসের প্রতিটি কোণায় দালালদের দৌরাত্ম্য, যার ফলে সেবা নিতে আসা মানুষের ভোগান্তি সীমাহীন। দালালমুক্ত পরিবেশ দাবি করে অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

পাসপোর্ট সবার নাগরিক অধিকার, যা নিশ্চিত করবে এই অফিস। কিন্তু এখানেই আপনার জন্য পাতা দালাল চক্রের ফাঁদ। লাইনের মানুষ ছাপিয়ে, কক্ষের দরজায় দালালদের অবাধ আনাগোনা। অফিসের ভেতরে কি চলছে, আর কত টাকার বিনিময়ে আপনার নাগরিক অধিকার বিক্রি হচ্ছে?

মো. ওয়াদুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাবেন তাই কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন পাসপোর্ট করতে। ফরম পূরণ থেকে টাকা জমা, সবই করেছেন নিজে। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে ঢুকতেই আটকে যান দালাল চক্রের জালে। অফিসের প্রতিটি জায়গায় দালালদের দৌরাত্ম্যে হাঁপিয়ে উঠেন তিনি।

শেষমেষ বাধ্য হয়ে ৬০০ টাকার বিনিময়ে নিজেকে সমর্পণ করেন দালালদের হাতে। চুক্তি অনুযায়ী ওয়াদুদের জন্য ভিআইপি ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তাকে দালালরা নিয়ে যান দোতলায়, যেখানে শুধু নারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়।

ভোক্তভোগী মো. ওয়াদুদ বলেন, 'তারা সাথে কথাবার্তা শেষ হলে তিনি আমাকে পাসপোর্ট অফিসের দোতালায় নিয়ে যান। যেখানে দেখা যায় শুধু নারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া। সেখানে নিয়ে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করে।'

এভাবে দালালদের দৌরাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে পাসপোর্ট অফিসের প্রতিটি কোণায়। এ গল্প শুধু ওয়াদুদের নয়, প্রতিদিনই সেবা নিতে আশা হাজারো মানুষের। পাসপোর্ট অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ২০ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত পাসপোর্ট করতে এসেছেন ১০ হাজার ৯৯২ জন। এদের অধিকাংশই দালালদের খপ্পরে পড়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। 

পাসপোর্ট করতে আসা একজন বলেন, ‘১১ হাজার টাকা চেয়েছিল দালাল। আর্থিক সমস্যার কারণে আসলে দিতে পারিনি।’

আরেকজন বলেন, ‘এমনও হয় কাগজপত্র কাড়াকাড়ি করে নিয়ে যায়।’

জেলার এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য এতই বেপরোয়া যেকোন কক্ষে খোদ চক্রের সদস্যরাই করছেন অফিস। সিরিয়াল করার নাম করে হাসিল করে নিচ্ছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত ফায়দা। তেমনি একটি চিত্র দেখা গেলো ফিঙ্গার নেওয়ার একটি কক্ষে যেখানে, মামুন নামে এক ব্যক্তি অফিসের কর্মকর্তা না হয়েও কাজ করছেন দিব্বি।

দালাল চক্রের সদস্য মামুন বলেন, ‘হাতের ফিঙ্গার রোগীরা দিতে পারছে না ওইগুলা আমি দেখায় দিচ্ছি আরকি।’

আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে এসব বিষয় নিয়ে জানতে অফিসকে দালাল ও দুর্নীতিমুক্ত বলে দাবি করেন তিনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আইরিন পারভীন ডালিয়া বলেন, ‘এইখানে আসলে এইসব হয় না। যদি হয়ে থাকে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে ব্যবস্থা নিবো।’

পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার। তারপরেও সরকারি ফি প্রদানের পরও বিনামূল্যে এ সেবা পাওয়া যেন স্বপ্ন। দালালদের দৌরাত্ম্য এবং অফিসে থাকা অসাধু কর্মচারীদের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনের বাড়ছে ভোগান্তি।

ইএ