ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমের ২২দিনে নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে না হতেই ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ডুবোচরগুলো দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীরা। আর এসব চরে মাছ ধরার নামে নিষিদ্ধ মশারি ও চরঘেরা জালে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে বিভিন্ন মাছের রেণু ও ডিম। হুমকির মুখে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন।
নিষিদ্ধ জালে অপরিকল্পিতভাবে মাছ শিকারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ জেলেরাও। আর অবৈধ জালের এই সিন্ডিকেটের কবল থেকে নদীমুক্ত করে প্রকৃত জেলেদের মাছ শিকারের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান আরও জোরদার করার কথা জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ৩ নভেম্বর তবে ভোলার মেঘনা তেতুলীয়া নদীতে ধরা পরছে না কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশসহ অন্যান্য মাছ। আগে এই সময় যেখানে নদীতে জাল ট্রলার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন জেলেরা, ঘাটগুলো থাকত জমজমাট সেখানে আজ মাছ সংকট আর শুনশান নিরবতা। নদী থেকে জেলেরা ফিরছেন খালিহাতে।
মেঘনার কাচিয়ার চর। প্রবেশ মুখের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা ডুবোচরটি শাহিন নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর লোকজন খুঁটি পুঁতে দখলে নিয়েছেন।
সরেজমিনে, সারিবদ্ধ খুঁটির গোড়ায় বেধে রাখা হয়েছে নিষিদ্ধ মশারি জাল। জোয়ারে চরগুলো ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে ডুবে গেলে মশারি জালগুলোকে খুটিরগোড়া থেকে টেনে খুঁটির উপরে বেঁধে দেয়া হয়।
ভাটার সময় পানি শুকিয়ে গেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সাথে ইলিশের ডিম, রেণু, অন্যান্য মাছের পোনা ও বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব জলজ প্রাণী ক্ষুদ্র ফাঁকের ওই মশারি জালে আটকে যায়। শিকারিরা সেখান থেকে শুধু মাছগুলো তুলে নিলেও শুকনো স্থানে পড়ে থাকা মাছের ডিম রেণু ও অন্যান্য জলজ প্রাণিগুলো মরা যায়।
কাচিয়ার চরের মতো সদর উপজেলার ভোলার চর, বৈরাগির চর, ভেদুরিয়া, রামদাসপুর, দৌলতখানের মদনপুর ও ভবানিপুর চরেও একইভাবে মশারি ও চর ঘেরা জালে মাছ ধরা হচ্ছে।
জেলেরা জানান, মেঘনা নদীর সদর উপজেলার ইলিশো থেকে সাগর মোহনার চরপিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার ও তেঁতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তুম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক ডুবোচর রয়েছে। সবগুলো চরেই স্থানীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ জালে জলে মাছ শিকার হয়।
চরঘেরা ও মশারি ছাড়া এসব সিন্ডিকেট সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাঁধা, বেহুন্দি, পিটানো, বেড়জাল, খুটাজাল, পিকজাল, ঘুন্ডিজাল, খরচি ও পাইজাল সহ ১১ ধরনের অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরে। এসব জালে ছোট ছোট মাছ ও মাছের ডিম নিধন এবং নদীর জীববৈচিত্র ধংস করছে। এতে দিন দিন মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় সংকটে পড়তে হচ্ছে সাধারণ জেলেদের।
তবে নদীর মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বৈধ জালে মাছ শিকারীদের সহযোগিতায় দখলদারদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার করা জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
ভোলার দুই লক্ষাধিক মানুষ মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করে জীবন- জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে শতাধিক অসাধু ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকারের সাথে জড়িত।